1

বিজিবি ক্যাম্পের সামনে ধরা হচ্ছে ইলিশ, পুলিশ নিচ্ছে অনৈতিক সুবিধা

রাজশাহীর বাঘায় পুলিশ এবং বিজিবি কর্মকর্তাদের গাফলতির কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান। মাসের শেষ পর্যায়ে এসে উপজেলা মৎস্য বিভাগ তদারকি বাড়ালেও বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে ইলিশ ধরছে জেলেরা। এ দিক থেকে চোরাইভাবে মাছ বিক্রির সময় সুবিধা নিচ্ছে পুলিশ।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত নদীতে ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে সরকার। তার পরেও এক শ্রেণির অসাধু জেলে গোপনে মাছ ধরছে। এই মাছ শিকার প্রতিরোধে দিনের বেলা পদ্মা নদীর কিছু-কিছু এলাকা উপজেলা মৎস্য বিভাগ অভিযান পরিচালনা করলেও অধিকাংশ জলাভূমি থাকছে উন্মুক্ত। মৎস্য বিভাগের দাবি, বিস্তীর্ণ এলাকায় পদ্মা প্রবাহিত হওয়ার কারণে সব এলাকায় একদিনে অভিযান সম্ভব হচ্ছে না। তারা একেক দিন একেক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন। এর ফলে রাত-সহ দিনের বেলায় অধিকাংশ সময় মাছ শিকার করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে জেলেরা।

সরেজমিন রবিবার (২৭-১০-১৯) সকাল সাড়ে ১০টার সময় বাঘার আলাইপুর পদ্মা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, আলাইপুর বিজিবি ক্যাম্প থেকে মাত্র ২ শ গজ দূরে পদ্মায় ইলিশ ধরছে কয়েকজন জেলে। এ সময় তাদের ছবি তুলতে গেলে তারা দ্রুত নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে ক্যামেরাবন্দি হয় ডোঙায় মাছ ধরা এক জেলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে জাল আটকের সময় যেসব মাছ পাওয়া গেছে তার অধিকাংশ হরিলুট হয়েছে। এ অভিযানে মাসের প্রথম দিকে কিছুটা সফলতা মিললেও শেষ সময়ে এসে তা একরকম ভেস্তে যায়। একই সাথে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে মৎস্য অধিদপ্তরকে সাথে না নিয়ে নদীতীরবর্তী এলাকায় মাছ বিক্রির সময় জেলেদের কাছ থেকে মাছসহ নগদ অর্থ উৎকোচ নেওয়ার।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে বিজিবি তাদের বিশেষ সহায়তা করেনি। অপর দিকে ওমর ফারুক নামে এক পুলিশ শনিবার (২৬-১০-১৯) রাত সাড়ে ৮টার সময় চকছাতারী গ্রামে ইলিশ বিক্রির সময় জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তিকে ২০ কেজি মাছসহ আটক করে থানায় আনে। এ খবর পেয়ে মৎস্য কর্মকর্তা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই ব্যবসায়ীর ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং উদ্ধার হওয়া মাছগুলো সরেরহাট এতিমখানায় দান করে দেন। তবে এতিমখানার পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা ডা. শামসুদ্দিন শমেস জানান, তিনি ওই রাতে থানা পুলিশ মারফত মাত্র ৬ কেজি মাছ পেয়েছেন।

এদিকে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে উপজেলা মাৎস্য বিভাগকে কেন সহযোগিতা করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে আলাইপুর বিজিবি কম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার ফরিদ উদ্দীন ও হাবিলদার মহিউদ্দীন বলেন, প্রথম দিকে সহায়তা করেছি। তার নমুনা হিসাবে আমাদের ক্যাম্পে উদ্ধার হওয়া প্রায় ১৫ হাজার মিটার জাল রাখা হয়েছে। বর্তমানে নদীতে অনেক স্রোত এবং আবহাওয়া খারাপ। এ জন্য সহায়তা করতে পারছি না। তবে মৎস্য জীবিদের নিকট হতে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার ঘটনা সত্য নয় বলে তারা দাবি করেন।

অপরদিকে বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, শনিবার রাতে পুলিশ মাছসহ এক জেলেকে ধরেছিল এ কথা ঠিক। তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাও করা হয়েছে। তবে জব্দকৃত মাছের পরিমাণ আমি সঠিক জানি না। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।