জীবিকার তাগিদে ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন লিমা । সে কারণে টঙ্গীর তুরাগ থানার দক্ষিণ খায়েরটেক মহল্লার মো.খোরশেদ আলমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। গত ৯ আগস্ট রাতে বাড়ির মালিক প্রভাবশালী খোরশেদ আলম তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। পরেরদিন (১০ আগস্ট) সকালে তুরাগ থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেন খোরশেদ। পরে নিহতের পরিবার ওই থানায় ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে গেলে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয়। সেই থেকে পরিবারটি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে ঘুরেও কোনো সহযোগীতা পায়নি। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের শরণখোলা প্রেসক্লাবে আহুত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মেয়েটির বাবা।
লিমা আক্তার (২০) বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বানিয়াখালী গ্রামের মো. ইউসুফ আলী হাওলাদারের প্রথম স্ত্রী মাসুমা বেগমের মেয়ে।
মেয়ের বাবা ইউসুফ আলী অভিযোগ করেন, তিনিও চট্টগ্রামের ইউনিয়ভার্সাল জিন্স লিমিডেট নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। লিমা তার প্রথম স্ত্রী মাসুমার একমাত্র সন্তান। ২০১৬ সালে প্রথম দিকে গাজীপুরের আ. জলিলের সাথে লিমার বিয়ে হয় । বিয়ের দুই বছর পরে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। এর পর থেকে ঢাকায় একাই থাকতো। গত ছয় মাস আগে তুরাগ থানার খায়েরটেক মহল্লার খোরশেদ আলমের বাড়ির চতুর্থ তলার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে লিমা। সেই থেকেই বাড়ির মালিক খোরশেদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে লিমার ওপর। লিমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত ও কুপ্রস্তাব দিতো বাড়িওয়ালা খোরশেদ। এসব কথা আগে থেকেই মা-বাবাকে জানিয়েছিলেন লিমা।
ইউসুফ আলীর অভিযোগ, ঘটনার দিন রাতে খোরশেদ আলম লোকজন নিয়ে তার মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে। পরেরদিন সকালে তুরাগ থানার দারোগা নির্মল বাবুকে ম্যানেজ করে আত্মহত্যার অপপ্রচার চালায়। সে অনুযায়ী পুলিশ লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তে জন্য পাঠায় এবং থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে। ১১ আগস্ট লিমার লাশ শরণখোলায় গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। অপমৃত্যু মামলায় মেয়ের মা মাসুমা বেগমের সাক্ষর পুলিশের ওই দারোগা নিজেই দিয়ে মামলাটি রেকর্ড করে বলে জানান পরিবারটি। পরবর্তীতে কয়েকবার তুরাগ থানায় ধর্ষনের অভিযোগ নিয়ে গেলে দারোগ নির্মল মেয়ের মা-বাবাকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়।
মা মাসুমা বেগম জানান, তার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে এরকম কোনো কারণ ছিল না। পুলিশ জানিয়েছে, সে সন্ধ্যা ৬টার দিকে গরায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ঘটনার দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেয়ের সাথে মোবাইলে কয়েকবার কথা হয় তার। পরেরদিন সকালে থানা থেকে মৃত্যুর খবর জাননো হয়। ওইদিন দুপুর ২টায় তুরাগ থানায় গেলে দারোগা নির্মল মেয়ের গলার চেইন ও দুইটি মোবাইল দিয়ে তার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে সাক্ষর নেয়। তবে জিডির কপিতে যে সাক্ষর সেটা তার না বলে দাবি করেন মাসুমা বেগম। তার মেয়েকে বাড়ির মালিক ধর্ষনের পর হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন। প্রসাশনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।
এ বিষয়ে বাডির মলিক খোরশেদ আলমের ০১৯১৪৭২৬৭৩৯ নং মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ভাই স্বপন সাহেব দাবী করেন, লিমা আত্মহত্যা করেছে। এখন আলমকে ফাঁসাতে ওই মেয়ের বাবা নতুন নাটকের সৃষ্টি করতে চাইছেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে তুরাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নির্মল চন্দ্র দেব মুঠোফোনে (০১৭১৪৫৫৫৭৩৩) বলেন, মেয়েটিকে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছেনা। রিপোর্ট আসতে দুই-তিন মাস সময় লাগে। রিপোর্টে যা আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়ের পরিবারের কারো সাথেই দুর্ব্যবহার করা হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।