বাগেরহাটে ভূয়া চক্ষু চিকিৎসা শিবির চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার পাটরপাড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার সোনাখালী গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে একই উপজেলার বিষখালী কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মরত মেডিকেল এ্যসিস্টান্ট মিজানুর রহমান (৩০), বাগেরহাট সদর উপজেলার কোড়ামারা গ্রামের বাবর আলী মল্লিকের ছেলে জুয়েল মল্লিক এবং একই গ্রামের মৃত ইউছুপ আলী শেখের ছেলে মাহফুজুর রহমান (৩৪)।
এলাকাবাসী জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চক্ষু রোগের চিকিৎসা করা হবে এমন মাইকে এমন প্রচারনা শুনে তারা চক্ষু চিকিৎসা নিতে আসেন। তারা মাত্র ৩০ টাকার বিনিময় রেজিস্ট্রেশন করে রোগী দেখা শুরু করে। এরপর তাদের “এশিয়া ডিজিটাল চক্ষু হাসপাতালের’ ব্যবস্থাপত্র দেয়াহয়। সেই ব্যবস্থাপত্রের মানহীন বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ লেখা হয়। এবং এসব রোগীর কাছে উচ্চমূল্যে সেসব ওষুধ বিক্রি করা হয়। বিষয়টি স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা ডাক্তারের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন জানতে চাইলে তারা উল্টাপাল্টা উত্তর দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয়দের কাছ থেকে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় এলাকাবাসী বাগেরহাট থানা পুলিশের খবর দিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করে।
এলাকাবাসী আরও জানান, তাদের কাছে থাকা রোগী রেজিস্টার দেখা গেছে, এই চক্রটি বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চক্ষু চিকিৎসা শিবির এর নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
কাড়াপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন জানান, তিনি ওপেন হার্ট সার্জারী করা রোগী। তাকে এক বোঝা ঔষধ দেয়া হয়েছে।
সাবেক প্রধান শিক্ষক লেয়াকাত আলী ননী জানান, তিনি চোখ দেখাতেই আসলে প্রথম একটি ইনজেকশন দিয়ে ২শ টাকা দেয়া হয়েছে। এরপর আরো ১২শ টাকা নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। ইনজেকশন দেয়ার পর তিনি বাড়ি গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বাগেরহাটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর মো: শাফিন মাহমুদ জানান, কয়েকজন ভুয়াচিকিৎসক চক্ষু চিকিৎসার নামে প্রতারণা করার অভিযোগে জনগণ তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জাম নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আটকের আগে এশিয়া ডিজিটাল চক্ষু হাসপাতাল নামে এই প্রতারক চক্রটি গত কয়েক মাস ধলে বাগেরহাট জেলার শ্যামবাগাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংগাতী মাদ্রাসা, চাকশ্রী বাজার কিন্টারগার্ডেন স্কুল, কাজী আজহার আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, শরফপুর মাদ্রাসা, বারুইপাড়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, আফরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীঘাট-সদুল্লাপুর মহিলা মাদ্রাসা, উৎকুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোশিদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈলতলী-পিলজং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইনতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাদোখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতশৈয়া ক্লাব, পানিঘাট ইসলামিয়া নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসা, পিলজং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চক্ষু ক্যাম্প করে প্রতারনার মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে এই প্রতারক চক্র পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিকার করেছে।
ভিডিও দেখুন