‘হটলাইনে ফোন করি নমুনা সংগ্রহকারী যাবে আপনার বাড়ী’ এই শ্লোগানে বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের উদ্যোগে বাড়ীতে-বাড়ীতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল বাগেরহাট সদর হাসপাতালে বাড়ীতে-বাড়ীতে গিয়ে র্যাপিট এন্টিজেন পরিক্ষা কার্যক্রমের উদ্ধোধন করেন, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক, সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূইয়া হেমায়েত উদ্দিন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মোর্শারফ হোসেনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্ধোধনের পর-পরই রোগীদের বাড়ীতে-বাড়ীতে গিয়ে করোনার র্যাপিট এন্টিজেন পরিক্ষার নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে জেলা ¯^াস্থ্য বিভাগ।
হটলাইন নম্বরে (০১৯২০-৯২২২২৯ ও ০১৪০০-৩০৫৪০৫) ফোন করলে করোনা পরীক্ষার জন্য গাড়ী নিয়ে প্রস্তুত
দুটি হটলাইন নম্বরে (০১৯২০-৯২২২২৯ ও ০১৪০০-৩০৫৪০৫) ফোন করলে করোনা পরীক্ষার জন্য গাড়ী নিয়ে প্রস্তুত থাকা ভ্রাম্যমাণ ল্যাব টেকনিশিয়ানরা উপসর্গ থাকা রোগীর বাড়িতে যেয়ে নমুন সংগ্রহ করবে। মিলবে পরীক্ষার ফলাফল (রেজাল্ট)। নমুন পরীক্ষায় কারও পজেটিভ হলে তাকে চিকিৎসার আওতায় নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রথমে বাগেরহাটে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা চার উপজেলায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মোংলা রামপাল উপজেলায় এবং শরণখোলা মোরেলগঞ্জ উপজেলায় পৃথক দুটি ভ্রাম্যমাণ নমুন সংগ্রহকারী দল উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করবে।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)।
বাগেরহাট বিএমএ’র জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, বাগেরহাট জেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। অনেকেই বুঝতেই পারছেন না তারা কোন রোগে ভূগছেন। সর্দি জ¦র মনে করে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন না। আবার অনেকে ভুল চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাগেরহাটের সংসদ সদস্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা যদি ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষের নমুন নিয়ে পরীক্ষা করা হলে ভাইরাসে আক্রান্ত তার একটি প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। উদ্যোগের ফলে করোনা সংক্রমিতদের চিকিৎসা দেয়া যাবে এবং তা করোনা রোধে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক নেতা।
বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, বাগেরহাট জেলায় প্রথম ঢেউয়ে করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর তা রোধে জনসচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি হাতে নেন জনতার এমপি শেখ তন্ময়। বাগেরহাটে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য বেশিবেশি পরীক্ষা করে রোগী সনাক্ত করতে হবে। এজন্য তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থ্যবিভাগের সহযোগিতা নিয়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষা করা হবে র্যাপিড কীটের মাধ্যমে। এতে বাগেরহাটবাসী উপকৃত হবে। বাগেরহাটের মোংলা ও রামপাল উপজেলাতে একটি ভ্রাম্যমাণ গাড়ী, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলাতে একটি এবং সদর উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ গাড়ী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হটলাইনে ফোন করলে বাড়ি গিয়ে তারা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে র্যাপিড কীটের মাধ্যমে তা পরীক্ষা করা হবে।
বাড়ীতে গিয়ে করোনার র্যাপিট এন্টিজেন পরিক্ষার নমুনা সংগ্রহ
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, করোনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উপসর্গ থাকা রোগীকে আইসোলেশনে রাখা এবং তাকে সনাক্ত করা। যাতে একজন থেকে অন্যজনে রোগটি না ছড়ায়। বাড়িবাড়ি গিয়ে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করার যে উদ্যোগটি বাগেরহাটের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় গ্রহণ করেছেন তা ভাল একটি উদ্যোগ। করোনার সন্দেহভাজন রোগী যদি বাড়ি থেকে হাসপাতালে আসতে যায় তখন ওই রোগী কিন্তু সংক্রমণ ছড়াবে। অনেকে আবার কোথায় যাব কিভাবে যাব এই ভয়ে অনেকে আবার হাসপাতালে পরীক্ষা করতে আসেনা। এই উদ্যোগের ফলে আমরা বেশিবেশি রোগী সনাক্ত করতে পারব। এই সনাক্ত হওয়া রোগীদের আইসোলেশনে রাখতে পারলে রোগের বিস্তার অনেকটাই কম হবে। জেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটা বেড়ে গেছে এই উদ্যোগ সংক্রমণরোধে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটের দুই সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ তন্ময় জেলার কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। বাগেরহাটের মানুষকে সচেতন করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি তারমধ্যে সবাই যেন সপ্রণোদিতভাবে করোনা পরীক্ষা করে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু তাদের আমরা সেভাবে সচেতন করতে পারছি না। অনেকে মনে করে টেষ্ট করালে নির্দিষ্ট সময় ধরে বন্দি থাকতে হবে। এই সমস্ত কারনে মানুষ করোনা টেষ্ট করতে আগ্রহী না। বাগেরহাট সদর আসনের সংসদ সদস্য যারা চেষ্ট করতে আমাদের কাছে আসবে না তাদের কাছে আমরা যাব যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন তা খুবই ভাল। ভ্রাম্যমাণ দল বাড়িতে যেয়ে নমুনা সংগ্রহ করে র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা করবে। সবাই মিলে কোভিডের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি এবং সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলেই করোনাকে মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এরআগে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে ডাক্তারের কাছে রোগী নয়, রোগীর কাছে ডাক্তার, ডাক্তার যাবে রোগীর বাড়িসহ নানা পদক্ষেপ নেন এই সংসদ সদস্য। তা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
ভিডিও দেখুন