দেশী বিদেশী ভক্ত ও ধর্মানুরাগীদের পদচারণায় মুখরিত বাগেরহাটের হাকিমপুর শিকদার বাড়ীর পুজা মন্ডপ। রোববার মহাঅষ্টমি পূজার দিন সকাল থেকে এই মন্ডপে ভিড় শুরু হয়। দুপুরের পরে ভিড় ক্রমেই বাড়তে থাকে। আর এসব ভক্ত দর্শনার্থীদের সামাল দিতে রিতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে কর্তব্যরত র্যাব, পুলিশ, আনসার ও নিজস্ব নিরাপত্তা দলের সদস্যদের। ৬৪১টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও শিকদার বাড়ির চিত্র ছিল ভিন্ন। এখানে শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সর্বস্থরের মানুষের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ। বাগেরহাট জেলায় এবছর এই মন্ডপে ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে মহাধুমধামে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত নয় বছর ধরে ব্যক্তি উদ্যোগে বেশি প্রতিমা নিয়ে দূর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে। বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে হলেও এই ধরনের আয়োজনে দুই বাংলায় বাগেরহাটের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়ির এখন সবার কাছে সুপরিচিত। দুর্গাপূজা আসলে এই গ্রামটির কথা এখন আর কাউকে মনে করিয়ে দিতে হয়না।
২০১০ সালে হাকিমপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদারের ব্যক্তিগত উদ্যোগে দূর্গাপূজা উপলক্ষে তার মন্ডপে প্রথমবার ১৫১টি প্রতিমা তৈরি করে সকলের নজরে আসেন। এরপর থেকে প্রতি বছরই এই মন্ডপে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত বছরের আগের বছর ছিল ৬৫১টি প্রতিমা। গত বছর ছিল ৭০১টি। আর এবার এই মন্ডপে ৮০১টি প্রতিমা তৈরী করা হয়েছে। এটি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামন্ডপ বলে দাবী করেন পূজার আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন সিকদার এবং বাগেরহাট পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায়।
গত বছর এখানে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চারযুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা তৈরী করা হয়েছিল। এবছর এখানে বিশেষ আকর্ষন রাখা হয়েছে পুকুরের মাঝখানে শ্রীকৃষ্ণের অষ্টম সঙ্গীকে নিয়ে নৌকা বিলাশ। তাছাড়া প্রতিমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সৃষ্টি রহস্য।
বরিশাল থেকে আসা দর্শনার্থী সুমন মন্ডল জানান, ৮০১টি প্রতিমার মাধ্যমে এখানে সৃষ্টি রহস্যসহ অনেক কিছু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।ধর্মের অনেক অজানা কাহিনী জানতে পারছি। আমরা সত্যি অভিভূত। এখানে এসে ভিড়ের মাঝেও অনেক তৃপ্তি পেলাম।
খুলনার ডুমারিয়া থেকে পরিবারের সাথে এসেছেন কলেজ ছাত্রী মাধবী সরকার। তিনি বলেন, বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির নাম এখন আর কারো অজানা নয়। এখানে এসে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। সত্যিই খুব ভাল লাগছে বলে জানান মাধবী।
পুজায় আসা বাগেরহাট শ্রমিক লীগের সভাপতি রেজাউর রহমান মন্টু ও সাধারন সম্পাদক খান আবুবকর সিদ্দিক বলেন, দূর্গাপূজা আসলে বাগেরহাট হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে হাকিমপুরের শিকদার বাড়ি সকলের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। এমন আয়োজন করার জন্য তারা আয়োজক লিটন শিকদারকে ধন্যবাদ জানান।
আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১০ সালে প্রথমে ১৫১টি দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করে সেই থেকে দূর্গাপূজা শুরু। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। এখানে পূজা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের পরিদর্শনে বইয়ে দেয়া মতামতের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে এই মন্ডপে প্রতিমার সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ানো হচ্ছে। এবছর ৮০১টি দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, বাগেরহাট জেলায় এবছর ৬৪১টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে করতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। আইনশৃক্সখলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা হচ্ছে হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে। এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।