বাগেরহাটে সনাতন ধর্মাবলম্বী সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূঁজার জন্য প্রস্তুত ৬৪১টি পূঁজা মন্ডপ। এসব মন্ডপে দেবী দুর্গাসহ প্রতিমাগুলো নিপুন ভাবে সাজিয়েছে প্রতিমা কারিগররা। অন্য বছরের মত এবছরও ব্যক্তি উদ্যোগে বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে ৮০১টি প্রতিমা এশিয়ার বৃহত্তম পুজা মন্ডপ তৈরি করা হয়েছে। আর নির্বিঘ্নে পুঁজা সম্পন্ন করতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। আয়োজক ও জেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদ নেতাদের দাবী এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক প্রতিমার দুর্গা পূঁজার মন্ডপ।
এছাড়া জেলার বেশ কয়েকটি মন্দিরে শতাধিক প্রতিমার মন্ডপ তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাড়াপাড়া গ্রামের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সার্বজনীন পূজা মন্দির, চুলকাঠি বাজারের বণিকপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, পোলঘাট সার্বজনীন পূজা মন্দির এবং ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের বেতাগা মোমতলা সার্বজনীন পূজা মন্ডগুলোতে বেশি সংখ্যক প্রতিমা তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে।
২০১০ সাল থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়ীতে বাগেরহাট তথা দেশের বৃহত্তম দূর্গাপূজাটি অনুষ্ঠিত হয় ব্যক্তি উদ্যোগে। বাগেরহাটে দূর্গা উৎসব মানেই শিকদার বাড়ী দূর্গাপূজা। লিটন সিকদার নামে এক ব্যবসায়ী মহাধূমধামে এই দূর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন। দিনদিন সেখানে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত বছরের আগের বছর ছিল ৬৫১টি প্রতিমা। গত বছর ছিল ৭০১টি। আর এবার এই মন্ডপে ৮০১টি প্রতিমা তৈরী করা হয়েছে। এটি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামন্ডপ বলে দাবী করেন পূজার আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন সিকদার এবং বাগেরহাট পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায়।
প্রতিমা শিল্পি বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় বলেন, ১৫ জন কারিগর তাদের নিপূণ হাতে গত ৬ মাস ধরে প্রতিমা তৈরীর কাজ করেছেন। গত বছর এখানে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চারযুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা তৈরী করা হয়েছিল। এবছর এখানে বিশেষ আকর্ষন থাকছে পুকুরের মাঝখানে শ্রী কৃষ্ণের অষ্টম সঙ্গীকে নিয়ে নৌকা বিলাশ। তাছাড়া প্রতিমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সৃষ্টি রহস্য।
মাগুরা জেলার কারুশিল্পি আঃ কুদ্দুস জানান, প্রথমে তিনি একা ককসিটের কাজ করেন ৫ মাস ধরে। অর্ধেক কাজ শেষ হলে আরো ১৫ জন লোক আনা হয়। তারা এই ৫মাস ধরে এখানে দিন-রাত কাজ করেছেন। এই মন্ডপটি সাধ্য অনুযায়ী সুন্দর করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।
ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এই মন্ডপের প্রতিমা দেখতে এসেছেন বলে তিনি জানান।
ফকিরহাট থেকে আসা সুমন বিশ্বাস জানান, সিকদারবাড়ির দুর্গাপূজা মানে একটা অন্যরকম উৎসবের আমেজ। এতো বেশি সংখ্যাক প্রতিমা দিয়ে মন্ডপ তৈরি করার কারনে হাকিমপুরের পরিচিত দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। পূঁজা শুরু হলে এখানে অনেক ভিড় থাকবে। তাই আগে ভাগেই এসেছেন তিনি।
এই মন্দিরে প্রতিমা দেখতে আসা তামান্না খাতুন জানান, হাকিমপুরের শিদারবাড়ী মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ দেখে এসে তিনি খুবই আনন্দ উপভোগ করেছেন। এতোগুলো প্রতিমা একসাথে একই মন্দিরে কিভাবে তৈরি করে তাই দেখতে আগেই এসেছেন তিনি।
আয়োজক লিটন সিকদার জানান, ২০১০ সাল থেকে আমি দূর্গাপূজার আয়োজন করে আসছি। প্রথম বছরে ২০১টি প্রতিমা দিয়ে শুরু হয়। স্থানীয় লোকজনের উৎসাহে দিনদিন প্রতিমার সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর হাকিমপুর গ্রামে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরের দর্শনার্থীরা দূর্গাপূজা দেখতে আসে। এবছরও এখানে সিসিটিভিসহ বিভিন্ন ভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায় জানান, দুর্গোৎসবে উপলক্ষ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি ভাল ভাবে চলছে। বিগত বছরের তুলনায় এবছরও মহা-আড়ম্বর পূর্ণ হবে আমাদের এ অনুষ্ঠান। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। প্রশাসনসহ প্রতিটি মন্ডপে থাকবে নিজেস্ব ভলেন্টিয়ার। তিনি বলেন, প্রতিমার সংখ্যার দিক থেকে হাকিমপুরের শিকদার বাড়ির পূঁজা মন্ডপ বিশ্বের সবচেয়ে বড় দূর্গা পূঁজার মন্ডপ।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, বাগেরহাট জেলায় এবছর ৬৪১টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূঁজা উপলক্ষে মন্দিরগুলোতে ৪ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সদর উপজেলার শিকদার বাড়িতে এশিয়ার বৃহত্তম দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই এই মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আলাদা ভাবে করা হয়।