1

বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরার এমডি মান্নানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত

বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদারকে দুই দিনের জন্য জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। দুদকের করা ১১০ কোটি টাকা পাচারের মামলায় রোববার বিকেলে বাগেরহাটের অতিরিক্ত মূখ্য বিচারিক হাকিম (অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) আবীর পারভেজের আদালতে হাজির করে গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহিত ১১০ কোটি টাকা কোথায় কার কাছে পাচার করা হয়েছে তা জানতে জিজ্ঞসাবাদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন দুদক কর্মকর্তা। আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানী শেষে মান্নানকে জেলগেটে দুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে দূর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুমতি দেন। এসময় মান্নান তালুকদারের আইনজীবীরা জিজ্ঞাসাবাদের বিরোধীতা করলে বিচারক তা নাকচ করে দেন। এই মামলার অপর আসামী নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মামলার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।

এদিকে, রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় পুলিশের কড়া প্রহরায় প্রতারণা মামলার আসামী আব্দুল মান্নান তালুকদারকে হাতকড়া পরিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে জেলা কারাগার থেকে বাগেরহাট আদালতে নিয়ে আসা হয়। আদালতে আনার পর তাকে সাধারণ কয়েদী আসামীদের সাথে হাজতখানায় রাখে পুলিশ। এসময় আদালতপাড়া ছিল পুলিশের নিছিদ্র নিরাপত্তা মোড়া। যা ছিল চোখে পড়ার মত। মান্নানকে আদালতে তোলার খবর পেয়ে তাকে দেখতে উৎসুক জনতা আদালতের বারান্দায় ভিড় করে।
গত ১৫ জুলাই দুদকের করা ১১০ কোটি টাকা পাচারের মামলার আসামী বসুন্ধরার এমডি আব্দুল মান্নান তালুকদার আত্মসমর্পণ করেন। এসময় আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে আসামীর আইনজীবীরা মান্নানকে হাতকড়া ছাড়াই ঘিরে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ীতে করে তাকে কারা ফটকে পৌছে দেন। এনিয়ে গনমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে আদালতে দায়িত্বে থাকা পাঁচ পুলিশ সদস্যকে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়। সেই থেকে মান্নান তালুকদার বাগেরহাট জেলা কারাগারে রয়েছেন।
দুদকের আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জী বলেন, গত ৩০ মে বাগেরহাট শহরের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদক ১১০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে। নিউ বসুন্ধরার এমডি আব্দুল মান্নান তালুকদার গত প্রায় নয় বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি হিসাবে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন। গ্রাহকদের কাছ সংগৃহিত এই বিপুল পরিমান অর্থ মান্নান তালুকদার ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে কোথায় কার কাছে পাচার করেছেন তা জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে আবেদন করেন। আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানী শেষে মান্নানকে জেলগেটে দুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে দূর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুমতি দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:  বাগেরহাটে অর্থপাচার মামলায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেটের এমডি মান্নান কারাগারে

গত ৩০ মে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় দুদকের খুলনা জেলা সম্প্রতি কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক (এডি) মো. শাওন মিয়া বাদী হয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১০ কোটি টাকা পাচারের একটি মামলা করেন। নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় শহরের মিঠাপুকুরপাড়ে অবস্থিত।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি আব্দুল মান্নান তালুকদার সেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান করা হয় বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ঈমাম আনিসুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তিকে। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর তিনি গ্রাহকদের প্রতিলাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার প্রলোভনে বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন। যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থি। গত কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি (একাউন্ট) হিসাব থেকে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া এই বিপুল পরিমান অর্থ তিনি ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেছেন। এই টাকা কোথায় পাচার করা হয়েছে তা জানতে দুদকের অনুসন্ধান চলছে।