1

বাগেরহাটের চিতলমারীতে একবছরে শিশু ও কলেজ ছাত্রসহ ছয় জন খুন : জনমনে আতংঙ্ক

বাগেরহাটের চিতলমারী এখন মৃত্যু’র উপত্যাকায় পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে এখানে ছয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে খুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ এখানে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে চিতলমারী বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কাওছার আলী তালুকদারের শিশু পুত্র খালিদ। এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে দু’টির রহস্য এখনও উদ্ধার হয়নি। ঘাতকদের অনেকে রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
পুলিশ, এলাকাবাসি ও নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৫ জুন)সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের চৌদ্দহাজারী ঈদগাঁ মাঠে কয়েকজন শিশুর সাথে খেলা করছিল খালিদ তালুকদার। সেখান থেকে নিখোজ হয় খালিদ। পরে অনেক খোজাখুজি করে না পেয়ে রবিবার (১৬ জুন) খালিদের পিতা কাওছার তালুকদার বাদি হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫-৬জনকে আসামী করে থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। (১৭ জুন) বিকেলে উপজেলার চৌদ্দহাজারী গ্রামের সবুজ তালুকদারের মৎস্য ঘের থেকে ভাসমান অবস্থায় ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলায় এজাহার নামীয় চৌদ্দহাজারী গ্রামের বাদশা তালুকদার, কামরুল শেখ এবং মেরি বেগমকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
সাদিয়ার পিতা মোঃ হেদায়েত তালুকদার জানান, তার মেয়ে সাদিয়ার ¯^ামী জাকারিয়া শেখ মালয়শিয়া থাকে। এই সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে তার উপর শ্বশুর বাড়ির লোকজন নানামুখি নির্যাতন চালিয়েছে। গত ২৭ মে সন্ধ্যায় সাদিয়ার শ্বাশুড়ী ফাতেমা বেগম, ভাসুরের স্ত্রী সাবিনা বেগম ও ভাসুরের ছেলে মাহমুদ শেখ সাদিয়াকে ব্যাপক মারপিট শেষে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যার পর তারা সাদিয়ার লাশ ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায়। নিহত সাদিয়ার মরিয়ম নামের দেড় বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
গত ২ এপ্রিল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রুবেল হাওলাদারকে একই গ্রামের আজিজ ফকিরের ছেলে লালন ফকির ডেকে নিয়ে যায়। খিলিগাতী বাজারের বটতলায় একটি মাছের ডিপোতে বসে গল্প করতে থাকে। সেখানে কিছু¶ণ পরে তার লোকজন রুবেল হাওলাদারকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানোসহ নির্মমভাবে নির্যাতন করে। রুবেল জ্ঞান হারালে তাকে ফেলে ওরা বীরদর্পে চলে যায়। ভয়ে খিলিগাতী বাজারের কেউ ওদের ঠেকাতে যেতে সাহস পায়নি গত ৩ এপ্রিল (শুক্রবার) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুবল মারা যায়।
নিহত আনোয়ারের ছেলে জানান, তার পিতাকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য মাছুয়ারকুল এলাকার একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। গত বছর (২০১৮) ৬ সেপ্টেম্বর বিকালে টাকা দেওয়ার কথা বলে এক মহিলা তার পিতাকে খবর পাঠান এরপর তিনি নিঁখোজ হন। নিঁখোজের দুইদিন পর ৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যায় এলাকাবাসি উপজেলার মাছুয়ারকুল গ্রামের রাস্তার পাশে ডোবায় বস্তাবন্দি অবস্থায় তার লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
নিহত সবুজের বাবা পরিতোষ বিশ্বাস জানান, গত বছর (২০১৮) ১৩ আগষ্ট রাতে চিতলমারী থানা থেকে কিছুটা দূরে একটি পরিত্যক্ত ঘরে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয় সবুজকে। এরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সবুজ। এ সময় গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে দুই বন্ধু। পরে গভীর রাতে লাশ পাশের একটি ডোবায় কচুড়ির নিচে গুম করে রেখে সবুজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে সিব্বির ও লিমন গোপালগঞ্জ শহরে তাদের আত্মীয় বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত লিমন খান উপজেলার আডুয়াবর্ণি গ্রামের হাসমত আলী খানের ছেলে ও সিব্বির ওই একই গ্রামের ছালাম খানের ছেলে। রবিবার দুপুরে আসামিদের তথ্যমতে সদর বাজারের পাশের একটি ডোবানালা থেকে হাত-পা বাধা অবস্থায় সবুজের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে নিহত মোসাদের বাবা বৃদ্ধ আওয়াল শেখ জানান, গত বছর (২০১৮) মে মাসে তার বাড়িতে ঠোকার পথে জঙ্গলের মধ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন পুর্ব থেকে ওৎ পেতে থেকে তার ছেলের উপর আক্রমন করে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বাড়ির উঠানে ফেলে চলে যায়। লোকজনের পায়ের শব্দ পেয়ে তারা বাইরে এসে দেখেন ছেলে মোসাদ উঠানে পড়ে আছে। প্রতিপ¶রা শ্বাসরোধ করে তার ছেলে মোসাদ শেখকে হত্যা করেছে। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।
এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার পরিদর্শক (ওসি) অনুকুল সরকার জানান, শিশু খালিদ হত্যা মামলার ৩ আসামীর রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। রুবেল হত্যা মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে। আনোয়ার হোসনে হত্যাকান্ড ও মোসাদের মামলাটি সিআইডিতে। তাছাড়া গৃহবধু সাদিয়ার ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ।