1

বাংলাদেশে পিঁয়াজের কেজি ১৪০ টাকা, ভারতে ৬ রুপি!

সর্বকালের সবচেয়ে কম দামে ভারতে বিক্রি হচ্ছে পিঁয়াজ। পণ্যটি’র বাজারে নেমেছে চরম ধস। গতকাল লাসাগাঁও অনলাইন মার্কেটে কেজিপ্রতি পণ্যটি ৬ থেকে ১০ রুপি দরে বিক্রি হয়েছে। আর সেই পিঁয়াজ বাংলাদেশের বাজারে কেজি প্রতি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ভারতের কৃষকরা এখন রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে কেন্দ্রকে চাপ দিচ্ছেন। আর কৃষকের চাপে কর্ণাটকে উৎপাদিত পিঁয়াজের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত। প্রতি চালানে সর্বোচ্চ ৯ হাজার মেট্রিক টন রফতানি করা যাবে বেঙ্গালুরু পিঁয়াজ। দেশটির হর্টিকালচার কমিশনারের অনুমতি নিয়ে চেন্নাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে এ পিঁয়াজ রফতানি করা যাবে।
জানা গেছে, কর্ণাটকের গোলাপি জাতের বেঙ্গালুরু পিঁয়াজ বাজারে চলে আসায় স্থানীয়ভাবে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের রাজ্য সরকারকে চাপ দিচ্ছেন, যাতে করে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া মহারাষ্ট্রে নির্বাচনও শেষ হয়ে গেছে। ফলে এ মুহূর্তে পিঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা রাখার আর কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছেন না ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। শেষে ২৮ অক্টোবর ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা এক আদেশে শুধু কর্ণাটক রাজ্যে উৎপাদিত ‘বেঙ্গালুরু গোলাপি পিয়াজ’ রফতানির অনুমতি দেয়। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর এক আদেশে পিয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। এর পর থেকেই বাংলাদেশে পণ্যটির দাম বাড়তে থাকে দফায় দফায়।

শেষ পর্যন্ত গতকাল পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ভারতের রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণায় পিঁয়াজের দাম দু-চার দিনের মধ্যে কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পিঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পিঁয়াজ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম মুঠোফোনে গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা শুনেছি কর্ণাটকি পিঁয়াজের রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য রাজ্যের পিঁয়াজেও দ্রুত এলসি খোলা যাবে বলে ভারতের রফতানিকারকরা আমাদের এটি জানিয়েছেন। আশা করছি খুব দ্রুত নতুন এলসি শুরু হবে। আমদানি করা মাল সীমান্ত দিয়ে আসতে শুরু করলেই দ্রুত বাজারে দাম কমে যাবে।’

আমদানিকৃত পিঁয়াজ না আসার কারণেই গত তিন-চার দিনে পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, কর্ণাটকের পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের কৃষক ও ব্যবসায়ীরাও পিঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে কেন্দ্রকে চাপ দিচ্ছেন। তারা শুধু একটি রাজ্য থেকে পিঁয়াজ রপ্তানির এই আদেশে ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে এশিয়ার পিয়াজের সবচেয়ে বড় বাজার লাসাগাঁওয়ের চাষিরা পিয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছেন।

অনলাইনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নতুন পিঁয়াজ বাজারে আসায় ভারতের বৃহত্তম বাজার লাসগাঁওয়ে কেজিপ্রতি পিঁয়াজের দাম ৬ থেকে ১০ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে দেশটির পিঁয়াজচাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাসাগাঁও এগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেট কমিটির সভাপতি সুভর্না জগতাপ সম্প্রতি দেশটির ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে বলেছেন, বিভিন্ন রাজ্য থেকে পিঁয়াজ আসা শুরু হওয়ায় পাইকারিতে পিয়াজের দাম দ্রুত কমছে। এর ফলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এখনই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এবং গুদামজাতের পরিমাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে কৃষকরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এদিকে ভারতের পাশাপাশি মিসর ও তুরস্ক থেকে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন পিঁয়াজ নিয়ে তিনটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘যে কোনো মুহূর্তে পিয়াজের দাম কমে যাবে। আমরা শুনেছি ভারতের পিঁয়াজের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। দেশের তিনটি বড় কোম্পানির আমদানিকৃত পিঁয়াজ এখন পথে। দু-এক দিনের মধ্যে বন্দরে জাহাজ ভিড়বে। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আগাম জাতের যে পিঁয়াজ উৎপাদিত হয় দেশে, সেটিও চলতি মাসে বাজারে চলে আসবে। ফলে পিঁয়াজ মজুদ রেখে কেউ যদি বেশি দাম পাওয়ার অনৈতিক চেষ্টা করেন, তবে সেই ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’