1

বাংলাদেশের জলসীমায় নিয়মিত মাছ ধরছে ভারতীয় জেলেরা

সাগরে টানা ৬৫ দিন মাছ আহরণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া উপকূলের জেলেরা দাবি করে আসছিলেন- ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করবে এ সময়। বৈরী আবহাওয়ার মুখে ৬ জুলাই পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ৩২টি ভারতীয় ট্রলারে ৫১৯ জেলে আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ সত্য বলে দাবি করেছেন উপকূলের জেলেরা। ঝড়ের কবলে দিক হারিয়ে ভারতীয় ট্রলার বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়েছে দাবি করা হচ্ছে। এ বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে উপকূলের জেলেরা বলছেন, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরার সময় ঝড়ের কবলে পড়েছেন। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি তুলেছেন উপকূলের জেলেরা।

তাদের বক্তব্য মতে, এখনও হাজার হাজার ভারতীয় জেলে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করছেন। সাগরে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দেশের জেলেদের সাগরে যাওয়া বন্ধ করতে পারলেও ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়নি।

আশ্রয় নেওয়া ভারতীয় জেলেরা পায়রা সমুদ্রবন্দর সংলগ্ন কোস্টগার্ড ঘাঁটিতে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আছেন। তাদের বিষয়ে কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দিচ্ছেন না। ভারতীয় হাইকমিশনের খুলনা দপ্তরের সহকারী হাইকমিশনার আর কে রায়নাসহ একটি প্রতিনিধি দল গত মঙ্গলবার কলাপাড়ায় এসে আশ্রিত জেলেদের খোঁজখবর নিয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান জানান, উত্তাল সাগরে দিগ্‌ভ্রান্ত হয়ে ভারতীয় ট্রলারগুলো বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করায় পায়রা কোস্টগার্ডের কাছে আশ্রয় নেয়। আশ্রিত জেলেদের সঙ্গে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সাক্ষাৎ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বরগুনা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘ভারতীয় জেলেরা কলাপাড়ায় আশ্রয় নিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, আমাদের অভিযোগই সত্য। আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি বাংলাদেশের জলসীমার সোনারচর থেকে হিরণ পয়েন্ট পর্যন্ত ২০০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ভারতীয় হাজার হাজার ট্রলার এখনও মাছ আহরণ করছে।’

উত্তাল সাগরে দিক হারিয়ে ট্রলারগুলো কলাপাড়ায় চলে এসেছে- ভারতীয় জেলেদের এ বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে গোলাম মোস্তফা বলেন, এখন পূর্বদিকের বাতাস চলছে। সে হিসেবে ট্রলার ভেসে যাবে পশ্চিম দিকে। কোনোভাবেই কলাপাড়ায় পৌঁছার কথা নয়। গত বছর ২১ জুলাই ঘূর্ণিঝড়ে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে যাওয়া বাংলাদেশি জেলেদের আট-নয় মাস সেখানকার জেলে থাকতে হয়েছে। ভারতীয় জেলেদের আইনের কাছে সোপর্দ করার দাবি জানাচ্ছি আমি।

কলাপাড়া ফিশিং ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোস্টগার্ড ঘাঁটিতে ভারতীয় জেলেরা জামাই আদরে আছেন। ৩২টি ট্রলারে বোঝাই বাংলাদেশের ইলিশ। এদের আইনের আওতায় আনা না হলে জেলে সংগঠনগুলো আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।’

কলাপাড়া মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি আনছার মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, ভারত ও বাংলাদেশের জলসীমার মাঝে আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। যেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ভারতের জলসীমা থেকে আন্তর্জাতিক সীমা পেরিয়ে বাংলাদেশের জলসীমার দূরত্ব প্রায় ৯২ কিলোমিটার বা ৫২ নটিক্যাল মাইল। ভারতীয় ট্রলার ঘণ্টায় ৮ নটিক্যাল বেগে ছুটতে পারে। সে হিসাবে ৫ ঘণ্টা ট্রলার চালিয়েই তারা বাংলাদেশের সীমায় ঢুকে মাছ ধরে নেয়।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওসানোগ্রাফি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসফাকুন নাহার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় ভারতের ট্রলার দিক হারিয়ে সাগরের দ্বীপ কিংবা জুলফিকার চ্যানেল বা সুন্দরবনের ভেতরে যাওয়ার কথা। পটুয়াখালীর দিকে চলে আসাটা অস্বাভাবিক।’ মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয়

উপপরিচালক ড. অলিউর রহমান উপকূলের জেলেদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাগরে মৎস্য বিভাগের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী দেখভাল করছে। ঝড়ের কবলে পড়া কয়েকজন ভারতীয় জেলেকে উদ্ধার করেছে বলে কোস্টগার্ড দাবি করেছে। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। উপকূলীয় এলাকার মৎস্য কর্মকর্তারা কোস্টগার্ডের সহায়তায় সাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেছেন।’ এ সময় ভারতীয় ট্রলার দেখা গেছে কি-না এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য না করে উপপরিচালক ড. অলিউর বলেন, ‘মন্ত্রণালয় পর্যন্ত বিষয়টি অবহিত করেছি আমি।’

উল্লেখ্য, মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের জলসীমার গভীর সমুদ্রে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় গত ২০ মে, যা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। বৈরী আবহাওয়ায় গত ৬ জুলাই রাতে পটুয়াখালীর মৌডুবী চ্যানেল হয়ে রাবনাবাদ চ্যানেলে ঢুকে পড়ে ৫১৯ জন জেলেসহ ৩২টি ট্রলার। পরদিন ৭ জুলাই পায়রা কোস্টগার্ড সদস্যদের কাছে আশ্রয় নেন তারা।