1

প্লাস্টিকের তৈরী জিনিসপত্রের ভিড়ে কদর নেই মৃৎশিল্পের

প্লাস্টিকের তৈরী জিনিসপত্রের ভিড়ে কদর কমে গেছে মৃৎ শিল্পের তৈরী জিনিসপত্রের। দিন দিন বিলুিপ্ত প্রায় রকমারি কারুকাজে সাজানো এসব মাটির তৈরী জিনিসপত্র। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নে শত বছরের পুরনো গ্রাম কুমোরপাড়ার কুমোরদের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের পৈতৃক ব্যবসা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্লাষ্টিকের তৈরি নানা রকমারী জিনিস মৃৎ শিল্পের জিনিসকে ঢেকে রেখেছে। মানুষ দিন দিন মাটির তৈরি জিনিস ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে। ৬বছর আগেও এখানকার কুমোররা মাটির জিনিসপত্র তৈরি ও বাজার জাত করে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সুখে জীবন যাপন করতো। এখন শুধুমাত্র গবাদি পশুর পানি পানের বোল আর বিভিন্ন মেলা উৎসবে শিশুদের খেলনা ছাড়া আর কোন জিনিসই চলে না । এতে যে পরিমাণে আয় হয় তাতে সংসার চালানো কষ্টের ব্যাপার। কুমোররা বলেন, তারা একসময় বিভিন্ন খাল-বিল থেকে মাটি সংগ্রহ করে তা দিয়ে তৈজষপত্র বানাত। কিন্তু বর্তমানে সেই সকল খাল বিল থেকে এঁটেল মাটি সংগ্রহ করতে তাদের ভূমির মালিকদেরকেও টাকা দিতে হয়। ফলে টাকায় কেনা মাটি এনে পেশা চালতে তারা হিমসিম খাচ্ছে। তাই পেশাকে জীবিত রাখতে কুমোররা বাধ্য হয়ে এঁটেল মাটি কিনে মাটির দ্রব্যাদি বানাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখাগেছে, মোগলহাটের কুমোর পাড়ার কুমোররা সাত সকালে উঠে এঁটেল মাটি পায়ে দলিত করে এবং সুর্যোদয়ের সাথে সাথে মাটির জিনিস পত্রের প্রাথমিক স্তর তৈরি করে রোদে শুকায়ে সপ্তাহে ২দিন তাতরা মাটিতে আগুন ধরায়। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে তারা তাদের ইট ভাটিতে আগুন লাগিয়ে সাদা মাটির দ্রব্যাদি আগুনে পুড়ে পরে নানা রঙে আঁকিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে বাজারজাত করে।

এসময় কথা হয় কুমার পাড়ার শ্রীনকী বালা, প্রমীলা বালা ও নগেন্দ্র চন্দ্র রায়সহ একাধিক ব্যক্তির সাথে। তারা বলেন, এখনকার ১০০টি পরিবারে মধ্যে ৭০টি পরিবারই অর্থাভাবে আছে। এখানকার কুমোর পাড়াটি সীমান্ত এলাকায়। মাত্র ২০ গজ ব্যবধানে ভারত। চারদিকে খোলামেলা পরিবেশ। তবুও তারা চোরাকারবারীর মত লাভজনক কাজে নিজেদের না জড়িয়ে বাবা-দাদার পুরনো বেশা আঁকড়ে ধরে কষ্টের সাথে যুদ্ধ করছেন।

শহরের বিডিআর হাটে মাটির তৈরী জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা অমূল্য চন্দ জানালেন, অর্থ কষ্টের মাঝেও তারা দেশের অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দিন দিন ঋণের বোঝায় ভারি করে তুলছেন। তাদের অনেকেই ঋণের বোঝা বইতে না পেরে পথে বসেছেন। আবার অনেকেই বাপ দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশা শুরু করেছেন। তাদের অভিযোগ সরকারের সুনিদিষ্ট পদক্ষেপের অভাবেই তাদের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারিভাবে এসব কুমোরদের সুদমুক্ত ঋণ অথবা যথোপযুক্ত সহযোগিতা দেয়া হলে মোগলহাটের কুমোররা পৈতৃক পেশায় মনোনিবেশ করে দেশের মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্যকে গতিশীল রাখবে এবং নিজেদের উন্নয়নে সফলকামী হবে।