1

প্রকল্পের টাকায় ২৯৯ জনের বিদেশ সফর

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পটি শুরু হয় ২০০৯ সালে। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের জুন মাসে। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সাল করা হয়। প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৮২ কোটি টাকা।

শাহ রেজোয়ান হায়াত এই প্রকল্পের উপপরিচালক। তিনি এই প্রকল্প মেয়াদে ১১ বার বিদেশ সফর করেছেন। প্রতিবছর প্রশিক্ষণের নামে তিনি বিদেশ সফর করেছেন। কম নন প্রকল্প পরিচালক মো. নাসিরুদ্দিনও। তিনিও প্রশিক্ষণের নামে একাধিকবার বিদেশ সফর করেছেন। এভাবে বিদেশ সফরের নামে এই প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করেছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে প্রকল্পের টাকা লোপাটের এ তথ্য। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কাজের নামে বিদেশ সফর, গাড়ি বিলাস, পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন কাজকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পের টাকা লোপাট করা হয়েছে। আবার নমুনা সংগ্রহকারী থেকে কর্মকর্তাদের পাহারায় থাকাদেরও বিদেশ সফরে পাঠানো হয়েছে। এভাবে বিদেশ সফরে পাঠানো ব্যক্তির সংখ্যা ২৯৯ জন। প্রকল্পের বড় কর্তারা গেছেন আমেরিকা, নরওয়ের মতো দেশে আর ছোটদের পাঠানো হয়েছে ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে।

এসব অনিয়ম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল সোমবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সরকারের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।

কেইস প্রকল্পে টাকা লোপাটের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রকল্পের টাকায় প্রশিক্ষণের নামে একই ব্যক্তি ঘুরেফিরে বিদেশ সফরে গেছেন। যাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই দেখা যায় তাঁরা অবসরে চলে গেছেন। ফলে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর প্রকল্পের উন্নয়নে কোনো কাজ হয়নি। এর জন্য বিশেষজ্ঞদের আগামীতে প্রকল্পে যুক্ত করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে।

তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্পে যাঁরা পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন না তাঁদেরও যুক্ত করা হয়েছে। তাই প্রকল্পের প্রকৃত কাজের মূল্যায়ন হয়েছে কি না তা পুনর্মূল্যায়নের জন্য পুনরায় আইএমইডিকে দিয়ে যাচাই করার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে বড় ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে। একইভাবে এর অধীনে নেওয়া প্রশিক্ষকদের বেশির ভাগ প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই অবসরে চলে গেছেন। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মঞ্জুরুল হান্নান বিদেশ সফরের পাশাপাশি প্রকল্পের তিনটি গাড়ি ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া প্রকল্পের কর্মকর্তা শামসুর রহমান খান, কাজী মনিরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, শাহানাজ রহমান ও নীল রতন সরকারসহ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ২৯৯ জন বিদেশ সফর করেছেন। এতে প্রকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেট ভারী হয়েছে বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কেইস প্রকল্পের অধীন ৩১টির সব গাড়ি নতুন কেনা হলেও বেশির ভাগ মেয়াদের আগেই অচল দেখানো হয়েছে। প্রকল্পের ১০ বছরে ৯টি গাড়ি বিকল হয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।