1

পুলিশি অভিযান চালিয়ে প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব

ভালোবাসার মানুষকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া নিয়ে নানা গল্প রয়েছে। প্রস্তাবের ধরনেও রয়েছে বৈচিত্র্য। কিন্তু পুলিশি অভিযান চালিয়ে, নিষিদ্ধ দ্রব্য বহন, মারামারি ইত্যাদি অপরাধের কথা বলে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া রীতিমত অবাক করার মতো। এই ধরনের প্রস্তাবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এক্সট্রিম প্রপোজাল’।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি রাশিয়াতে ঘটছে এমন ঘটনা। তরুণ-তরুণীদের মাঝে ‘এক্সট্রিম প্রপোজাল’ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটিতে। প্রতিবেদনে একটি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, সেইন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আনাস্তাসিয়া। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে একটি বার্তা এলো। তার প্রেমিক সের্গেই জানালেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বিমানবন্দরে যেতে পারছেন না তিনি। তার বদলে এক বন্ধু তাকে গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেবেন। আনাস্তাসিয়ার জন্য সবকিছু এই পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিল।

কিন্তু যখন গাড়ি বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছল, ঠিক তখনই পথ রোধ করে দাঁড়ালো কালো কাঁচ লাগানো একটি গাড়ি। তা থেকে নেমে এলো মুখোশ পরা অস্ত্রধারী কয়েকজন। প্রেমিকের বন্ধু গাড়ি চালককে টেনে সরিয়ে নেওয়া হলো। এরপর আনাস্তাসিয়ার সুটকেস খুলে পুরো উল্টে পাল্টে দেখতে শুরু করলেন অস্ত্রধারীরা।

প্রেমিকার সামনে হাঁটু গেড়ে বসছেন সের্গেই। ছবি: বিবিসি

তল্লাশিতে সুটকেস থেকে বের হলো মোড়ক ভর্তি সাদা এক ধরনের গুড়ো। কালো রঙের বিশেষ বাহিনীর মত পোশাক পরা লোকগুলোর মধ্যে থেকে একজন নারী আনাস্তাসিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি নিষিদ্ধ দ্রব্য বহন করছেন বলে সন্দেহ করছি আমরা।’

এই কথা শুনেই ভয় পেয়ে গেলেন আনাস্তাসিয়া। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে তিনি বলার চেষ্টা করলেন, ‘আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ওগুলো আমার নয়।’

এসময় পুরুষদের মধ্যে একজন চিৎকার করে ধমকে উঠলেন। বললেন, ‘তাহলে এগুলো কার? অনেক নাটক হয়েছে।’

হঠাৎ লোকটি আনাস্তাসিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। গোলাপি রঙের ছোট একটা বাক্স বের করলেন পকেট থেকে। এক টান দিয়ে নিজের মুখোশ খুলে ফেললেন। বলে উঠলেন, ‘আমাকে বিয়ে করো।’

প্রেমিকা সের্গেইয়ের এমন কাণ্ডে অবাক হয়ে গেলেন আনাস্তাসিয়া। দমবন্ধ হওয়ার মত পরিস্থিতি। কোনো মতে নিজেকে সামলে প্রেমিককে জড়িয়ে ধরলেন।

সম্প্রতি রাশিয়াতে এ ধরনের একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। তাদের কাজই হলো অভিনেতা পাঠিয়ে, নাটক সাজিয়ে বিয়ের প্রস্তাবকে চমকপ্রদ করা। আর প্রেমিক-প্রেমিকাদের সাহায্য করা। এই ধরনের সাহায্য আবার ফ্রিতে মেলে না। সে জন্য গুনতে হয় টাকা।

যেমনটি হয়েছে সের্গেইয়ের ক্ষেত্রে। তার খরচ পরেছিল ৩০ হাজার রাশিয়ান রুবল। টাকার পরিমাণ নাটকের ধরনের উপর নির্ভর করে। যদি আপনি বিশাল নাটক সাজাতে চান তাহলে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়।

বিয়ের প্রস্তাবের পরে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরেছেন। ছবি: বিবিসি

এদিকে সের্গেইয়ের ইচ্ছে ছিল সহকর্মীদের দিয়ে নাটকটি সাজাবেন। কিন্তু তাতে তিনি অনুমতি পাননি বিয়ের প্রস্তাব দিতে সেবা দেওয়া ‘এক্সট্রিম প্রপোজাল’ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।

যারা এসব প্রতিষ্ঠানের অভিনেতা হিসেবে কাজ করছেন তাদের মধ্যে সেনা ও পুলিশের জওয়ান রয়েছে। আর নাটককে বাস্তবসম্মত করতে লোকজনকে হাতকড়া পড়ানো, মাটিতে ফেলে তল্লাশি, গাড়ির গায়ে ঠেসে ধরে রাখা এমন অনেক কিছুই তারা করেন। ফলে পুরো ঘটনাকে বাস্তব মনে হয়।

যারা এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তারা খণ্ডকালীন হিসেবে কাজ করে থাকেন। রাশিয়ায় এ রকম ১৩টি প্রতিযোগী কোম্পানি রয়েছে। বাচ্চাদের জন্মদিনের পার্টিতেও কাজ করে এ কোম্পানিগুলো।

এদিকে দেখা গেছে, এসব নাটক সব সময় সফল হয় না। মাঝে মধ্যে উল্টোও হয়। এই যেমন রাশিয়ার পেনজা অঞ্চলের আলেকজান্ডারের বেলায় ঘটেছে। এমন নাটক সাজিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গিয়ে প্রেমিকার পিটুনি খেয়েছিলেন তিনি।

কারণ তার প্রেমিকা ইউলিয়া ঘটনায় ভয় পেয়েছিলেন। তার নাকি হার্ট অ্যাটাকের মত অবস্থা হয়েছিল। তাই প্রস্তাবের পর তার হাতে তুলে দেওয়া ফুলের তোড়া দিয়ে রীতিমতো পিটিয়েছিলেন প্রেমিককে।

মনোবিজ্ঞানী পলিনা সলদাতোভা বলছেন, ‘এই ধরনের বিয়ের প্রস্তাব ইঙ্গিত দেয় যে, দৈনন্দিন জীবনে রাশিয়ার পুলিশের ভূমিকা কেমন।’