1

পুত্রবধূ রাস্তায় ফেলে যায় বৃদ্ধা শাশুড়িকে, উদ্ধার করলো ফেসবুক গ্রুপের সদস্যরা

শীতের রাত। টাঙ্গাইলের বাড়ই খাল ব্রিজের পাশে একটি গাড়ি থামে। ৬০ বছরের এক বৃদ্ধাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় এক নারী। পেছন থেকে ‘বউমা, বউমা, আমারে রাইখা যাইওনা’ বলে কাঁদতে থাকে বৃদ্ধা। কিন্তু বউমা আর থামেননি। স্থানীয় অনেকেই সেই দৃশ্য দেখেছেন কিন্তু কাছে যাওয়ার আগেই স্থান ত্যাগ করেন বৃদ্ধার বউমা ওই নারী।

ঘটনাটি প্রায় ৬-৭ মাস আগের। টাঙ্গাইলের বাড়ই খাল ব্রিজের পাশে ওই বৃদ্ধাকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। সেই থেকে বৃদ্ধার ঠিকানা কখনো গাছের নিচে, কখনো রাস্তার পাশে, কখনো আবার ব্রিজের নিচে। বর্তমানে তার ঠিকানা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস এলাকার আন্ডারপাসের নিচে। বৃদ্ধা বর্তমানে কোনো কথা বলতে পারেন না, শারীরিক অবস্থাও খুব মুমূর্ষু।

গতকাল রবিবার স্বেচ্ছাশ্রম নির্ভর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘পারি ফাউন্ডেশন’ সেই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ঢাকার কল্যাণপুরের ‘চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার হোম’ বৃদ্ধাশ্রমে হস্তান্তর করেন। এ বিষয়ে পারি ফাউন্ডেশন তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও আপলোড করেন।

পারি ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজ থেকে জানা যায়, ফেলে যাওয়া সেই বৃদ্ধার নাম রহিমা বেগম। সমাজের অন্যান্য হতভাগা মানুষের চাইতে ৬০ বছর বয়স্কা রহিমা বেগমের জীবনটা একটু বেশিই করুন। খুব অসুস্থ থাকার পরও রহিমা বেগমের কাছ থেকে অস্পষ্টভাবে জানা যায় তার বাড়ি ঢাকায়। পুত্র মারা যাওয়ার কিছু দিন পরেই তার পুত্রবধূ রাতের অন্ধকারে তাকে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা টাঙ্গাইল হাইওয়ে রোডের মির্জাপুর আন্ডারপাসের নিচে ফেলে রেখে যায়।

পুত্রবধূর এ রকম অমানবিক আচরণে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে বয়স্কা রহিমা বেগম। রাস্তার ধারেই চলতে থাকে তার জীবন। কোন চলন্ত পথিকের মানবিকতায় রুটি কলা যে যা দেয় তা খেয়েই রাস্তার ধারে রোদ বৃষ্টির নিচে দিন রাত পড়ে থাকে বয়স্কা এই মা। শরীরটা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে রহিমা বেগমের। শরীরের মাংসগুলো শুকিয়ে চামড়াগুলো অনেকটা হাড়ের সাথে মিশে যায়।

এ বিষয়ে চলতি মাসে একটি নিউজ আসে একটি পত্রিকায়। নিউজটি নজরে আসে ‘আইডিয়াল মির্জাপুর টাঙ্গাইল’ ফেসবুক গ্রুপের সদস্যদের। আইডিয়াল মির্জাপুর গ্রুপের সদস্যরা রহিমা বেগমকে রাস্তা থেকে তুলে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কুমুদিনী হসপিটালে নিয়ে যায়। কুমুদিনী হসপিটালে তাকে ভর্তি না করালে তারা তাকে নিয়ে যায় মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানেও তাকে ভর্তি না করালে রহিমা বেগমকে নিয়ে যাওয়া হয় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া বৃদ্ধাশ্রমে। খুব অসুস্থ এবং ময়লাযুক্ত শরীর থাকায় হতভাগা রহিমা বেগমকে রাখতে চায়নি বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ।

হাল ছাড়েনি মির্জাপুর ফেসবুক গ্রুপের অদম্য সদস্যরা। সর্বশেষ তারা ঢাকায় ‘পারি ফাউন্ডেশন’ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে হতভাগা রহিমা বেগমের বিষয়টি বিস্তারিত জানায়। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং মানবিক বিবেচনায় পারি ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ সাথে সাথেই যোগাযোগ করে ঢাকা কল্যাণপুরে অবস্থিত ‘চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার হোম’ নামক বৃদ্ধাশ্রমে।

পারি ফাউন্ডেশন এবং চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার হোমের লোকজন যৌথভাবে গতকাল ভোরে (২১ জুলাই) ঢাকা থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হতভাগা রহিমা বেগমকে খুঁজে পায় দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের নবনির্মিত মসজিদের পাশে বালু মাটির উপরে।

সেখান থেকে রহিমা বেগমকে তুলে নিয়ে মসজিদের পাশের টিউবওয়েলে প্রথমে তাকে শ্যম্পু সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসা হয় চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার হোমে। এখানেই চলছে রহিমা বেগমের উন্নত চিকিৎসা।

ঢাকায় হতভাগা রহিমা বেগমের অস্পষ্ট ঠিকানা পেয়েছে পারি ফাউন্ডেশন। পারি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবু তালিব বলেন, তিনি এখনও সুস্থ হয়ে ওঠেননি। তিনি এখন খুবই অসুস্থ। ঠিকমত কথা বলতে পারছেন না। তাই তার পুরো ঠিকানা এবং আত্নীয়-স্বজনের বিষয়ে জানার জন্য আমরা তাকে বিরক্ত করিনি। একটু সুস্থ হলেই তার কাছ থেকে পুরো ঠিকানা সংগ্রহ করে তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের খোঁজ করব।