1

পানিবন্দি ২০ জেলা : আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

চলমান বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ জেলা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ২৩ পয়েন্টে দেশের বড় বড় নদী বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বাঘাবাড়ি ও গোয়ালন্দ পয়েন্ট বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। একই সঙ্গে বেড়েছে নদীভাঙনের প্রকোপ। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। ত্রাণের অপেক্ষায় বন্যার্তরা। বানের পানি ঢোকায় প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা তথ্যকেন্দ্র। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেলার ৫৫টি ইউনিয়নে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে ৩৯০টি গ্রামের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে ডুবে চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চীন, নেপাল ও ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডুবে গেছে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন। গতকাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে রেল চলাচল। এই রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস এবং ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস নামের দুটি আন্তঃনগর ট্রেন এবং কয়েকটি লোকাল মেইল এবং কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় অন্তত এক কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। হবিগঞ্জের বাহুবলে করাঙ্গী নদীর ওপর ব্রিজের এক পাশের মাটিতে ধস দেখা দিয়েছে। এতে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একই জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় ভেঙে যাওয়া কুশিয়ারা ডাইকের মেরামতের কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।

চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। এক সপ্তাহ পর কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কে গতকাল সকাল থেকে বান্দরবানের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে।

এদিকে বন্যাকবলিত এলাকার স্বল্প ও মাঝারি গরুর খামারিরা জানিয়েছেন, গোখাদ্যের সংকট হওয়ায় গরু রুগ্‌ণ হয়ে পড়ছে। একে আসন্ন কোরবানির বাজারে গরুর ভালো দাম না পাওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।

গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, তাদের ৯৩টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমায় পৌঁছে যাচ্ছে। আর ২৯টি পয়েন্টে পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। ২৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। অপরিবর্তিত আছে একটি পয়েন্টে। আজ বুধবার থেকে লালমনিরহাট, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়সহ অনেক প্রদেশে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

পাউবোর বন্যা বিশেষজ্ঞরা বর্তমান পরিস্থিতিকে আগাম ও মাঝারি মাত্রার বন্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। গতকাল পর্যন্ত ২০টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটবে। তারপর আবার আগস্টের মাঝামাঝিতে বড় ধরনের বন্যা হতে পারে বলে তারা জানান।

বন্যায় দেশে খাদ্য সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। শুধু খাদ্যগুদামে না, ত্রাণের খাদ্যও মজুদ আছে। যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি আছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, গতকাল পর্যন্ত ২০টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যাকবলিত প্রতিটি জেলায় ৭শ’ টন চাল, ১১ ধরনের চার হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গবাদিপশুর খাদ্যের জন্যও সোমবার প্রতি জেলায় এক লাখ করে টাকা এবং শিশুদের খাদ্যের জন্য এক লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় ৫শ’টি করে তাঁবু পাঠানো হয়েছে।

পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম আজ বুধবার মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা এবং ১৮ জুলাই হবিগঞ্জ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ এবং জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবেন।

গতকাল ডিসি সম্মেলনে চলমান বন্যা মোকাবেলা ও বাঁধ সংস্কারে ডিসিদের পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। তিনি বলেছেন, পানি কমতে শুরু করলে সারাদেশে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। বাঁধ ভেঙে আর যেন কোনো নতুন এলাকা প্লাবিত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্নিষ্টদের দেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, বন্যাকবলিত জেলার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে এক হাজার ৩৬৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তরের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে রেড ক্রিসেন্ট জেলা ইউনিটের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে শুকনা ও রান্না করা খাবার, হাইজিন কিটস্‌, নিরাপদ পানি, তারপলিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।