1

পবিত্র শবে বরাআতের ফজীলত, করণীয় ও বর্জনীয়

সময়ের চাকা ঘুরে আবার মুসলিম মিল্লাতের দ্বারপ্রান্তে হাজির হয়েছে পবিত্র শবে বরাআত । এই পবিত্র রজনীর মধ্যে নিহিত রয়েছে গুনাহ থেকে মুক্তি ও কল্যাণ লাভের সূবর্ণ সুযোগ। চন্দ্র বছরের অষ্ঠম মাস শাবান। শাবান শব্দের অর্থ শাখা প্রশাখা বের হওয়া । এই মাস প্রচূর কল্যাণ ও নেকির মাস । তাই তার নাম হয়েছে শাবান । এ মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাতকে বলা হয় লাইলাতুল বরাআত বা শবে বরাআত। লাইলাতুল অর্থ রাত্রি এবং আল বরাআত শব্দের অর্থ গুনাহ থেকে মুক্তির রজনী ।

বস্তুতঃ এ রাতে গুনাহগার বান্দাদের গুনাহ মাপের এক উত্তম সুযোগ প্রদান করা হয় । মহান আল্লাহ উম্মতে মোহম্মদীর ফজিলত ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য যতগুলো সুযোগ প্রদান করেছেন তার মধ্যে শা’বান মাসের এ রাত অন্যতম। ইমাম মানযির রাসুলে করিম (সাঃ) থেকে হাদিস বর্ননা করেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত এবং অর্ধ শা’বানের রাত জেগে ইবাদাত করবে তার অন্তর সে দিন ( কেয়ামতের দিন ) মরবে না ।

যে দিন অন্তর সমূহের মৃত্যুর দিন হবে । হযরত ইবনে ইয়াসার (রঃ) বর্ণানা করেন, এক শা’বান থেকে পরবর্তী শা’বান পর্যন্ত যত লোক মারা যাবে তাদের লিখিত সূচি অর্ধ শা’বানে রাতে মউতের ফেরেস্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়। অথচ এই মুহুর্তে তাদের কেউ কেউ খামারে কাজ করতে থাকে, কেউ বিয়ে করতে থাকে, কেউ অট্রালিকা তৈরীতে মত্ত¡ থাকে। ও দিকে আজরাইল তৈরি থাকে কখন আল্লাহর হুকুম হবে, আর কখন সে রুহ কবজ করে নেবে ।

 

ফজিলত ও করণীয় :
শবে বরাআতের রাত তাৎপর্য মন্ডিত । এর যথেষ্ট ফজিলত ও বরকত রয়েছে। অন্য দিকে মাহে রমাজানের পূর্বের মাস হওয়ার কারনে মূলতঃ এটি মাহে রমাজানের সাধনা ও অধ্যবসায়ের পূর্ব প্রস্তুতির মাস। রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন শা’বান আমার মাস আর রমজান মহান আল্লাহর মাস। হুজুর আকদাস (সাঃ) এরশাদ করেন, যখন তোমাদের সামনে শবে বরাতের আগমন হয় তখন তোমরা সেই রাতে জাগ্রত থেকে কাটাও ও নামাজ পড় কোরআন তিলাওয়াত কর, আর দিনের বেলায় রোজা রাখ। কারণ ওই দিন সূর্যাস্তের পরপরই মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আকাশে ফজর পর্যন্ত স্বীয় নূরের তাজাল্লীর বিচ্চুরণ ঘটান এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় -কোন গুনাগার নাফরমান ব্যক্তি আছে কি – যে আমার সমীপে ক্ষমা প্রাথনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব । রিযিক প্রাথী কেউ আছে কি – যে আমার কাছে রিযিক প্রার্থনা করবে? তার জন্য আমার রিযিক ভান্ডার খুলে দিব। কোন বিপদ গ্রস্থ আছে কি – যে আমার কাছে মুক্তি চাবে? আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব। সারারাত মহান আল্লাহর তায়ালার পক্ষ থেকে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত এই ভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়ে থাকে এবং বান্দাদের উপর আল্লাহর রহমত অজস্র ধারায় নাজিল হতে থাকে (ইবনে মাজা)।

হয়রত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সাঃ) বলেন, আজ রাত জন্ম মৃত্যু নিধারণ, জীবিকা বন্টন এবং মানুষের সকল কার্যবলী আকাশে উঠানো হবে (জামিয়াতুল তালেবিন )। হয়রত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেন শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে হযরত জিবরাইল (আঃ) আমার নিকট এসে বললেন, হে মোহাম্মাদ (সঃ) আপনার মাথা আকাশের দিকে উঠান, কেননা আজ বরকতের রাত। আমি বললাম কেমন বরকত? হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন এ রাতে মহান আল্লাহপাক রহমতের ৩০০ দরজা খুলে দেন। রাতের চতুর্থাংশে পুনরায় জিব্রাইল (আঃ) এসে বললেন হে মোহাম্মাদ (সাঃ) মাথা উত্তোলন করুন, আমি মাথা উত্তোলন করে দেখলাম বেহেস্তের সব দরজা খোলা।

প্রথম দরজা থেকে এক জন ফেরেস্তা দাড়িয়ে বলছেন আজ রুকুকারীদের জন্য সুসংবাদ। দ্বিতীয় দরজা থেকে এক জন দাড়িয়ে বলছেন, আজ সেজদাকারীদের জন্য সুসংবাদ। তৃতীয় দরজায় এক জন দাড়িয়ে বলছেন, আজ জিকিরকারীদের জন্য সুসংবাদ । চতুর্থ দরজায় এক জন দাড়িয়ে বলছেন, আজ আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীদের জন্য সুসংবাদ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কখন পর্যন্ত এই দরজা খোলা থাকবে। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন সুবহে সাদিক পর্যন্ত। হযরত হাসান বসরী ( রহঃ) নবী করিম (সাঃ) এর ৩০ জন সাহাবীর থেকে বর্ণনা করেন, এ রাতে নামাজ আদায়কারীদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা ৭০ বার রহমতের দৃষ্টি করে থাকেন এবং প্রত্যেক দৃষ্টিতে ৭০টি ইচ্ছা পূরন করে থাকেন। রাসুল (সাঃ) বলেন এ রাতে আল্লাহ তালা বণী ক্বালব, বণী নজীব ও বণী রবি এ তিন বংশের বকরী ভেড়ার পশম সমতুল্য অসংখ গুনাহগারকে মাফ করে দেন। উল্লেক্ষ্য এদের অধিক বকরী ছিল। আমাদের উচিত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এ রাতে বেশী বেশী নফল নামাজ, তওবা ,দুরুদ শরীফ পাঠ জিকির আজগার ও কোরআন তেলাওয়াত এবং সকল মৃত মুসলিম নর-নারীর জন্য দোয়া করা ।

 

কাদের গোনাহ মাফ হবে না :
এত বরকতময় রজনীতেও কিছু লোকের দোয়া আল্লা কবুল করবেন না। এরা হল মুশরিক, আল্লাহর সাথে শত্রæতা পোষণকারী, পিতা মাতার অবাধ্য সন্তান, আত্বিয়তা ছিন্নক্কারী, মদ পানকারী, জুয়াড়ী, অত্যাচারী সৈনিক, তবলা বাদক ।

বর্জনীয় :
শবে বরাআত মহান আল্লাহর দেওয়া একটি পবিত্র রাত । এ রাতে অনেক পুরুষ মহিলা ইবাদাতে মশগুল থাকেন । কেউ আবার মনগড়া রীতিনীতি নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার মূলক কাজ ছওয়াবের আশায় করে থাকেন। এতে ছওয়াব না হয়ে হয় কঠিন গুনাহ। যেমন – বোমাবাজী বা আলোকসজ্জা করা, মসজিদে অযথা মোমবাতি জ্বালানো, গরু, ছাগল, মোরগের গোশত যোগাড় করাকে আবশ্যক মনে করা।

এ ছাড়া পবিত্র শবে বরায়াত উপলক্ষে আমাদেও দেশে হালুয়া রুটি বনানোর হিড়িক পড়ে যায় । অথচ হালুয়া রুটি সম্পার্কে কোন প্রমান শরিয়াতে নেই । এটা সম্পূর্ণ বিদআত ।
মহান আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে এ পবিত্র রজনীতে সঠিক ভাবে ইবাদত করার তৌফিক দান করেন। ( আমীন)

লেখক- সাংবাদিক