1

নতুন ভিডিওতে যা বললেন প্রিয়া সাহা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে করা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখা দিয়ে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সংস্থা ‘শারি’র পরিচালক প্রিয়া। ‘শারি বাংলাদেশ’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ওই ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এতে তার বর্তমান অবস্থা এবং আরও বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

প্রকাশিত ভিডিওতে প্রিয়াকে একটি মোবাইল ফোন সামনে রেখে কোনও এক সংবাদ কর্মীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে নানা প্রশ্ন করা হয়; এর উত্তরও দেন তিনি।

ট্রাম্পের কাছে করা অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রিয়া সাহা বলেন, বাংলাদেশের যে পরিসংখ্যান বই রয়েছে, ২০০১ সালের পরিসংখ্যান বইয়ে; সেখানে যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু চ্যাপ্টার রয়েছে সেখানে বিষয়গুলো লেখা রয়েছে। অন্য কোনও তথ্যও আছে।

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর যে জনগণনা রিপোর্ট বের হয় সে রিপোর্ট অনুসারে দেশভাগের সময় সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ছিল ২৯.৭ ভাগ, এখনকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যঅ ৯.৭ ভাগ। দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় এখন ১৮০ মিলিয়নের মতো; সে ক্ষেত্রে একইভাবে যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেত তাহলে অবশ্য যে জনসংখ্যা আছে তথ্যটা মিলে যায়।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হারিয়ে যাওয়া বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন- এমন প্রশ্নে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি বোঝাতে চেয়েছি এই পরিমাণের লোক থাকার কথা ছিল। যেভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সেভাবে সংখ্যালঘু নেই। কমে গেছে সেটাই আমি বোঝাতে চেয়েছি।’

প্রিয়া সাহা বলেন, ‘ আমি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইনি। আমার নিজের কথা বলেছি। আমার গ্রামের বাড়ি পিরোজ পুর। সেখানে এই মানুষগুলো কোথায় আছে। আপনারাও জানেন।’

তিনি বলেন, আমি ভালো নেই। আপনারা দেশে আছেন, প্রতিটি বিষয় আপনারা দেখছেন। প্রতিটা অবস্থা কি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম বা সংবাদ মাধ্যম বা বিভিন্ন ব্যক্তি বা কোন পর্যায় থেকে, সে ব্যাপারে আপনারা খুব অজ্ঞ।

এক প্রশ্নে প্রিয়া সাহাকে বলতে শোনা যায়, আমার পরিবার ভীষণ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ বাসার সামনে কালকে তালা ভাঙতে চেষ্টা করা হয়েছে। কালকে আমার বাসার সামনে মিছিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সব চাইতে বড় ব্যাপার হলো, আমার পরিবারের ছবি ছেপে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। কথা বলেছি আমি, তারা আমার ছবি দিতে পারতো। কিন্তু আমার পরিবারের ছবি পত্রিকায় দিয়ে তাদের সবার জীবনকে বিপন্ন করে তোলা হয়েছে। আপনি গিয়ে এলাকায় দেখেন, পত্র-পত্রিকায় দেখেন। কারণ তারা আমার কাজের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই কেউ যুক্ত নয়।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রিয়া সাহা বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আমাকে পাঠায়নি। তারা একটু চাইলেই সেটা খোঁজ করতে পারেন। আমাকে আইআরআর থেকে সরাসরি ফোন করা হয়েছে, ইমেল পাঠানো হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে আমাকে এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি যে আসবো, সেটাও আমি যেদিন আসছি তার আগের দিন আমি জানতে পেরেছি। হঠাৎ করেই আসছি। আমি ইমেল পেয়েছি। আমাকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তার মাধ্যমেই আমি এসেছি।

প্রিয়া সাহা বলেন, আসলে এই কথাগুলো আমি কেন বলি, প্রথমে তো এই কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ২০০১ সালে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে নির্বাচন উত্তর চরম নির্যাতন চলছিল ৯৪ দিন ধরে।

তিনি বলেন, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজকের প্রধানমন্ত্রী, তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী তিনি সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য সারা পৃথিবীতে ঘুরেছেন। সমস্ত জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার অনুসরণে আমি বলেছি।

গত ১৬ জুলাই ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বিলীন হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা বাংলাদেশেই থাকতে চাই। সেখানে এখনো ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু থাকার জন্য সাহায্য করুন।’

ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে এমন অভিযোগের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তার বক্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার অভিযোগ নিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও। এক ফেসবুক পোস্টে রোববার তার অভিযোগগুলোকে ভয়ঙ্কর মিথ্যা বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

অভিযোগ উঠলেও প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে এখনই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, সবার আগে প্রিয়া সাহার বক্তব্য শুনবে সরকার। এরপর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া প্রিয়ার অভিযোগকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে মনে করেন না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, এটা তার (প্রিয়া সাহার) ব্যক্তিগত ঈর্ষা চরিতার্থের জন্য করেছেন। তার বক্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়ে গেছে বলে মনে করি না।