1

ডেঙ্গু রোগীর চাপে চিকিৎসকদের হিমশিম অবস্থা

রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তানিয়া সুলতানা নামে এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয়েছে এক ঢাবি শিক্ষার্থীর।

এদিকে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হাসপাতালে বেড়েছে রোগীদের ভিড়। আসন, চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

এ ছাড়া রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা শহরগুলোতেও বিস্তার লাভ করেছে ডেঙ্গু। সামান্য একটু জ্বর বোধ করলেই চেকআপের জন্য সবাই ছুটছেন হাসপাতালে। কেউই জ্বরকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না। কারণ এবার অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।

বেডের তুলনায় রোগী বেশি : এদিকে হাসপাতালের বেডের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও। রাজধানীর বেশির ভাগ হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। স্যার সলিমুল্লাহ মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসকদের অভিযোগ, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সে পরিমাণে ডাক্তার বা নার্স নেই। এ জন্য তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা, চিকিৎসকের চেম্বার এবং লিফটের সামনে থেকে শুরু করে বাথরুমের দরজা পর্যন্ত সর্বত্র রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসাধীন একজন ডেঙ্গু রোগী জানান, ‘দুদিন আগে মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়েছি। ভর্তি হওয়ার সময় কোনো বেড পাইনি। এ জন্য ফ্লোরে বেড পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। হাসপাতালে বেডের চেয়ে রোগী বেশি।’

মেডিসিন বিভাগের একজন সিনিয়র নার্স বলেন, ‘এই ইউনিটে ডেঙ্গু আক্রান্তসহ ১৭২ জন রোগী রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আগের রোগীসহ নতুন রোগী যোগ হওয়ায় আমরা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’

মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতি ২০ রোগীর মধ্যে তিনজন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানেই তাদের ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ঢাকার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৫৩৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ১১ জন রোগী। সব মিলিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৫৪৭ জন নতুন রোগী। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টার হিসাব তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোট ৫৪৭ জন রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন, খুলনা বিভাগে একজন ও বরিশাল বিভাগে একজন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৫৩৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ১১২ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৫৮, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৭, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৬৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৩২ জন, বারডেম হাসপাতালে ১০, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৮, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪২ ও পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সাতজন।

ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ফিরোজ কবীর স্বাধীনের (২৫) মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।ফিরোজ গত এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি ছিলেন।

চিকিৎসকের মৃত্যু : আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. জসীম উদ্দিন খান জানান, বুধবার খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ডা. তানিয়া সুলতানাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক অবস্থাতে টেস্টের মাধ্যমে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তানিয়া সুলতানা মারা যান।’

ডা. তানিয়া রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকতেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বুধবার ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিনই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তানিয়া সুলতানা ঢাকা মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস পার্ট-২-এর শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ৪৭তম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন।

এর আগে গত ১৭ জুলাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিগার নাহিদ দিপু নামে আরেকজন চিকিৎসক মারা যান। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৩২ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। তিনি কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বগুড়ায় ২৮ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে : বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন। গতকাল শুক্রবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মুসা আল মুনসুর জানান, গত তিন-চার দিনে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু রোগী ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ১৬ জনের শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু মিলেছে। তারা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আরো ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। মোট ২৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। ওই রোগী জানিয়েছে, তিনি ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে বগুড়ায় এসেছে। শনাক্ত করা রোগীরা ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে বগুড়ায় এসেছে বলে তারা জানিয়েছে। তিনি আরো জানান, আক্রান্ত রোগীদের মশারি দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় রাখা হয়েছে। যাতে অন্য রোগীরা আক্রান্ত না হয়।