বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন




‘জনগণ ভোট দিতে পারেনি’ মেননের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশ: রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯

‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি গত নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি’ ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের মিডনাইট ভোট নিয়ে মহাসত্যটা প্রকাশ করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন জোটের এই নেতা।

রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

রিজভী বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জনগণের ভোট ডাকাতি করে যারা এখন গণভবন দখলে রেখে চটুল কথাবার্তা বলে নিজেদেরকে ধোয়া তুলশী পাতা প্রমানের চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু তাদের আসল চেহারা সবাই জানে। কথায় বলে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সত্যকে কখনও ধামাচাপা দেয়া যায় না। সত্য কোন না কোনভাবে প্রকাশিত হয়ই। নিশিরাতের সরকারের সঙ্গী রাশেদ খান মেনন যে কোনো কারণেই হোক, এবার নিজের মুখে মহাসত্যটি স্বীকার করেছেন, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি। তিনি বলেছেন-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ। উন্নতির প্রচারণার আড়ালে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। ক্যাসিনো অভিযানের নামে ছিঁচকে কিছু দুর্নীতিবাজ ধরা হলেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ এদেরকে কবে ধরা হবে সে প্রশ্নও তুলেছেন জনাব মেনন।

অবশেষে সত্য কথাটা অকপটে জনগণের সামনে স্বীকার করতে হলো মেনন সাহেবকে। বিবেকের তাড়নায় মেনন সাহেব যে সত্যকথাগুলি বলতে শুরু করেছেন, হয়তো কয়েকদিন পর ওবায়দুল কাদের এবং হাসান মাহমুদরাও বলবেন। আর এই কথাগুলি যতোই তাদের নিকট থেকে বেরিয়ে আসবে ততোই বন্ধক রাখা আত্মা মুক্ত হবে।

রিজভী বলেন, এখন যারা গণভবন দখলে রেখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চটুল কথাবার্তা বলছেন, নয় লক্ষ কোটি টাকা পাচারের দায় দায়িত্ব তারা এড়াতে পারবেন না-যা মেনন সাহেব উল্লেখ করেছেন। খালেদ, শামীম কিংবা ক্যাসিনো সম্রাটদের কাঁধে টাকা পাচারের দায় দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে গণভবন দখলকারীরা নিজেদের দায়মুক্তির যেই কূটকৌশল অবলম্বন করছেন, তাদের চালাকি জনগণের কাছে স্পষ্ট। দেশ থেকে নয় লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেলো, গণভবন দখলকারীরা জানেন না, এটা জনগণ বিশ্বাস করেনা। গত একদশকে লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে, এই লুটপাটের সঙ্গে তারা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িত। এখন দুই একটা ইমিটেশন সম্রাটদের ধরে নয় লক্ষ কোটি টাকা পাচারের সম্পূর্ণ হিসেব তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কূটকৌশল জনগণ ঠিকই বুঝতে পারে।

প্রসঙ্গত, শনিবার বরিশালে এক অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দেয়নি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪দলীয় জোটের অন্যতম নেতার মুখে এমন মন্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার তৈরি হয়েছে।

অশ্বিনী কুমার টাউন হলে শনিবার ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা কমিটির সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি ও প্রধানমন্ত্রীসহ যারা নির্বাচিত হয়েছি আমাদেরকে দেশের কোনো জনগণ ভোট দেয় নাই। কারণ ভোটাররা কেউ ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে নাই।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, গত নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আজ দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে সরকার। সরকার দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল করেছে, দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নের নামে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে।

উন্নয়নের নামে আজ দেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে সরকার। তাই কেউ মুখ খুলে মত প্রকাশ করতে পারে না।

রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, বিগত সরকারের প্রধান খালেদা জিয়া ও তার হাওয়া ভবনে বসে দুর্নীতি লুটপাট করার কারণে কেউ সাজা ভোগ করছে, অন্যরা পালিয়ে গেছে।

বর্তমানে সরকারে থেকে যারা দুর্নীতি লুটপাটসহ বিদেশে অর্থ পাচার করছে তাদের বিচার করবে কে? কে নেবে তাদের অর্থের হিসাব?

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের আড়াল করে যতই শুদ্ধি অভিযান চালান, তাতে কিছুই হবে না। আমাকে ১৪ দলের পক্ষ থেকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন।

আমাকে মন্ত্রিত্ব দিতে চেয়েছেন। প্রত্যাখ্যান করেছি, তাদের প্রয়োজনে আমার মন্ত্রিত্বের জন্য কোনো ক্ষোভ নেই। ওয়ার্কার্স পার্টি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছে এবং সবসময় বলে যাবে।

১৪ দলে আছি, আমরা সবসময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করব। নেতাকর্মীদের পাশে থাকার আহ্বান জানাই।

বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল হক নিলুর সভাপতিত্বে জেলা সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় পলিট ব্যুরো সদস্য আনিছুর রহমান মল্লিক।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ টিপু সুলতান, মহানগর আহ্বায়ক শান্তি দাস, কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ বাড়ৈ, টিএম শাহজাহান হাওলাদার, আবদুল মান্নান, ফায়জুল হক বালী ফারহিন, সিমা রানী শীল ও শাহিন হোসেন।

রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে তারাই আজ এ দেশের গণতন্ত্রকে গলা কেটে হত্যা করেছে। এ কারণেই সারা দেশে রাজনীতির অবক্ষয় হয়েছে।

দেশের ৪ কোটি মানুষ এখনও দারিদ্র্য সীমায় বাস করছে। এসব কৃষক-ক্ষেতমজুর ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য দেশে পেনশন স্কিম চালু করার দাবি জানান রাশেদ খান মেনন।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765