1

ছোট্ট মেয়েটা কাশ্মীরে, দু’দিন ধরে গলা শুনি না

কাশ্মীরের উপর থেকে বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে ভারত। এরপর থেকে থেকেই সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

শুক্রবারেও গোটা রাজ্য জুড়ে ছিল কারফিউ, স্তব্ধ হয়ে রয়েছে সেখানের জনজীবন। সর্বত্র ভারতীয় সেনাদের টহল। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে অন্তত ছয় কাশ্মীরি নিহত ও পাঁচ শতাধিক গ্রেফতার হয়েছেন।
এদিকে দু’দিন আগে কাশ্মীর থেকে দিল্লিতে আসা জম্মু-কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্টের এক নেতা বলেন, আমার চার বছরের মেয়েটা এখন কাশ্মীরে আছে। গত ৪৮ ঘণ্টা ওর গলা শুনিনি। জানি না কেমন আছে? এই মানসিক অবস্থা শুধু আমার একার নয়, প্রত্যেক কাশ্মীরবাসীর।

রবিবার মধ্যরাত থেকে সেখানে ফোন, টেলিভিশন, ইন্টারনেটসহ সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সে সময় কাশ্মীরেই ছিলেন তিনি।

ওই নেতা আরও বলেন, মনে হচ্ছিল, বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপে রয়েছি। এই দেশের নাগরিক হয়ে অন্য প্রান্তের খবর জানার অধিকার নেই। সর্বত্র কারফিউ জারি রয়েছে। রাস্তায় সেনারা টহল দিচ্ছে।

তিনি বলেন, খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান, বাজার-ঘাট সব বন্ধ। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ধরপাকড় চলছে। আমার দল জম্মু-কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্টের অনেককেই আটক করা হয়েছে। অথচ, ভারতীয় মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, কাশ্মীরে নাকি সব স্বাভাবিক!

তিনি বলেন, আমি গত পরশু দিল্লি এসেছি। পরিবারের সবাই নিষেধ করছিল। আমার পরিবার এখন কেমন আছে জানি না। জানতাম, এমনই ঘটবে। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, কাশ্মীর থেকে বাইরে আসা জরুরি। যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন একটা শহরে বসে থাকলে ওখানকার কথা কেউ জানতে পারবেন না। তাই ঈদেও বাড়িও যাব না। ঈদ পালনও করব না।

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়িটা বিমানবন্দরের কাছেই। সেটুকু দূরত্ব পেরোতেই নাজেহাল হতে হয়েছে। বারবার চেক পোস্টে গাড়ি দাঁড় করানো হচ্ছিল। বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখলাম, যারা দেশের অন্য প্রান্ত থেকে কাশ্মীরের বাড়িতে ফিরছেন, তারা দাঁড়িয়ে আছেন। কীভাবে ঘরে পৌঁছাবেন কারো জানা নেই। কোনও গাড়িই চলছিল না। বাড়িতে জানিয়ে যে, আগাম গাড়ি আনিয়ে রাখবেন তারও কোন উপায় নেই। ফোন বন্ধ। তবে আজ থেকে নাকি ট্যাক্সি চলছে।

বাড়িতে রেশন ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। এখন ওরা কী খাচ্ছে, জানি না। যাদের বাড়িতে কেউ অসুস্থ, তাদের হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়ার উপায় নেই। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের নিয়ে ভয়ে ভয়ে রয়েছেন তাদের পরিবার। অনেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কারণ, প্রসববেদনা যখন উঠবে, তখন হাসপাতালে ঠিকঠাক পৌঁছানো যাবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।

এদিকে লোকসভায় পাশ হওয়ার তিন দিনের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিলে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর করার ফলে আগামী ৩১ cccঅক্টোবর থেকে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে আত্মপ্রকাশ করবে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ।