মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৭ অপরাহ্ন




চীনের যৌনবাজারে ভোগ্যপণ্য নেপাল ও পাকিস্তানের মেয়েরা

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

চীনের যৌনবাজারে ভোগ্যপণ্য হিসেবে বেড়েই চলেছে নেপাল ও পাকিস্তানের মেয়েরা। প্রায় প্রতিনিয়ত অভিনব কৌশলে চীনের যৌনবাজারে পাচার হচ্ছে নেপাল ও পাকিস্তানের মেয়েদের।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নেপালের গরিব ঘরের নারীদের চাকরির প্রতিশ্রুতি বা বিয়ে করে চীনে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। লোভনীয় চাকরি, দুর্দান্ত সুবিধা এবং একটি লাল পাসপোর্ট করিয়ে দেওয়ার সুবিধার কথা বলে নারী পাচার করা হচ্ছে চীনে। লাল পাসপোর্ট করতে পারলে চাইনিজকেও বিয়ে করেত পারবে বলে জানানো হচ্ছে। এর ফলে সামান্য আয়ের কৃষক বা শ্রমিকরা তাদের মেয়েদের চীনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বা দালাল চক্রের হাতে তুলে দিচ্ছেন। পরে ওই দালালরা চীনে নিয়ে গিয়ে যৌনদাসী হিসেবে যৌন পল্লীগুলোতে বিক্রি করে দিচ্ছে।

এই ঘটনা শিকার হন লামজুংয়ের বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী এক নেপালি নারী। তিনি জানান, গরিব ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা একজন কৃষক। তার বাবার অল্প আয়ে সংসার চলছিল না। তারপর তিনি একই এলাকার ভারত নামের এক দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ওই দালাল তাকে চীনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। প্রথমে তিনি রাজি হননি। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে রাজি হন। তিনি বলেন, ভারত আমাকে জানায় যে চীনের এক নাগরিকের সঙ্গে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দেবে। পরে আমি রাজি হয়ে যাই।

ওই নেপালি নারী জানান, পরে চীনের ওই নাগরিকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করা হয়। তারপর বিয়ের সব কাগজপত্র তৈরি করা হয়। তিনি চীনের নাগরিকের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। কিন্তু বিয়েতে রাজি হয়ে যান। সব কাগজপত্র তৈরি করে চীনের যাওয়ার জন্য আগস্টের ২৮ তারিখের একটি টিকেট দেওয়া হয়। সব ঠিক থাকলেও হঠাৎ করেই তিনি মত পরিবর্তন করেন। অল্পের জন্য রক্ষা পান পাচারের হাত থেকে।

নেপাল পুলিশের অ্যান্টি-হিউম্যান ট্র্যাফিকিং ব্যুরোর তথ্য মতে, ওই নারী পাচারকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। কিন্তু মানব পাচারকারীদের তৈরি করা বিয়ের জালে ধরা পরে পাচারের শিকার হচ্ছেন হাজারও নারী। বিশেষ করে গ্রামের নারীরা এই ঘটনা শিকার হন সবচেয়ে বেশি। তারা জানান, নেপালি নারীদের যখন বিয়ে করে চীনে নেওয়া হয়, তখন অন্য কোনো ব্যক্তির হাতে তাদের তুলে দেওয়া হয় অথবা বিক্রি করে দেওয়া হয় যৌন পল্লীগুলোতে।

পরে ৩১ আগস্ট নেপাল পুলিশ নারী পাচারের সঙ্গে জাড়িত থাকার সন্দেহে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই নেপলি নারীদের চীনের নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার নাম করে বিক্রি করে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলো।

শুধু নেপালেই নয় পাকিস্তানেও হাজার হাজার নারী পাচারের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গত মে মাসেই নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত এমন সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান পুলিশ। নারী পাচার চক্রের সদস্যরা পাকিস্তানি তরুণীদের চীনে পাচার করত। গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আট জন চীনের ও চারজন পাকিস্তানের নাগরিক।

পাকিস্তানি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগেই ফয়সালাবাদে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে হানা দেয় পুলিশ। একজন খ্রিস্টান মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো সেটি। অনুষ্ঠানে চ‌ীনের একজন পুরুষ ও একজন নারীকে এবং একজন ভুয়া পাদরিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির কর্মকর্তা জামিল আহমেদ বলেন, পাকিস্তানি নারীদের চীনে পাচার করে তাদের দিয়ে পতিতাবৃত্তির কাজ করানোর খবর আমাদের কানে আসার পরেই এই গ্যাংয়ের ওপর নজর রাখছিলাম আমরা। বেশ কয়েকটি গ্যাং এই কাজ করে। প্রধানত পাকিস্তানি খ্রিস্টান সংখ্যালঘু মানুষই এদের লক্ষ্য।

জামিল আহমেদ বলেন, ওই গ্যাংয়ের সদস্যরা স্বীকার করেছে যে তারা কমপক্ষে ৩৬ জন পাকিস্তানি মেয়েকে চ‌ীনে পাঠিয়েছ। চীনে তাদের পতিতাবৃত্তির জন্যই ব্যবহার করা হয়।

এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নামের একটি সংগঠন। তারা জানায়, পাকিস্তানি নারী পাচারের সাম্প্রতিক রিপোর্ট যা দেখাচ্ছে, তাতে পাকিস্তানকে সতর্ক হওয়া উচিত।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765