1

চিতলমারীতে ১৫ বছর ধরে সক্রিয় ‘গোল্ড কয়েন’ চক্র : ৪ দিনধরে রাস্তায় ঘুরছে প্রতারণার স্বীকার বাস চালক

বাগেরহাটের চিতলমারীতে ‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের অভিনব প্রতারণার স্বীকার হয়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার খুয়িয়ে ৪ দিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে সাতক্ষীরার দরিদ্র বাস চালক আইউব আলী। এবিষয়ে চিতলমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ এঘটায় ব্যবহৃত একটি মটর সাইকেল উদ্ধার করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে দাবী পুলিশের।

স্থানীয়রা জানান, কখনও মিসকল দিয়ে, কখনও সামান্ন পরিচয়ের সুত্র ধরে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে সখ্যতা গড়ে তোলে এই চক্রটি। এরপর সুযোগ মত ওইসব ব্যক্তিদের মূল্যবান গোল্ড কয়েন দেয়ার কথা বলা হয়। কখনও বিশ্বাস বাড়াতে তাদের এলাকায় এনে স্থানীয় স্বর্ণকারের দোকানে নিয়ে গোল্ড কয়েন পরিক্ষা করেও দেখানো হয়। এরপর দর কষাকসি চলতে থাকে। নির্ধারিত দিনে ক্রেতাকে টাকা নিয়ে আসতে বলা হয়। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়া হয়। সবকিছু হাতিয়ে নেয়ার পর কখনও ওই চক্রের অন্য সদস্যরা ভূয়া পুলিশ সেজে গোল্ড কয়েন ক্রেতাকে নানা ভাবে হয়রানি করার কথা বলে আরো অর্থ হাতিয়ে নেয়। কখনও বা পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাদের পালাতে বাধ্য করা হয়। এই ভাবে গত এক যুগ ধরে প্রতারণা করে আসছে চিতলমারীর একটি ‘গোল্ড কয়েন চক্র’।

এই চক্রের সদস্যরা হলেন, চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী গ্রামের মৃত রঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে কিরোণ বিশ্বাস, মৃত খগেন্দির বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস, জিতেন বিশ্বাসের ছেলে অনুপ বিশ্বাস ও তাপস বিশ্বাসসহ ৮/১০ জন।
‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের সর্বশেষ প্রতারণার  কার হয়েছেন সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দুরলী গ্রামের বাস চালক আইউব আলী।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় গত ১৫ দিন আগে পরিচয় হয় বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রদীপ বিশ্বাসের সাথে। ওই এলাকা দিয়ে তারা বাড়ি ফিরছিল। তাদের কাছে কোন টাকা ছিল না। মানবিক কারনে কোন প্রকার ভাড়া নেয়া ছাড়াই তাদের পৌছে দেন তিনি। বাস থেকে নামার সময় উপকার করায় প্রদীপ বিশ্বাস তার কাছে মোবাইল নাম্বার চেয়ে নেন। পরে বাড়িতে ফিরে প্রদীপ তার মোবাইলে কল দেয়। অল্প সময়ে ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় তার সাথে। একপর্যায়ে তাকে গোল্ড কয়েনের কথা বলা হয়। প্রথমেই তিনি এটা নিয়ে অ স্বীকার করেন। তাদের পিড়াপিড়িতে অবশেষে রাজি হয়ে, তার আত্মিয়-স্বজন, প্রতিবেশি ও সুদের করে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) চিতলমারী আসেন।

এদিন দুপুরে তাকে স্থানীয় ডাকাতির মোড় এলাকার নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর তার কাছ থেকে জোরপূর্বক ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে তাকে কাউকে কিছু না বলার হুমকী দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় তিনি চিতলমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এঘটনায় ব্যবহৃত একটি মটরসাইকেল উদ্ধার করেছে। তিনি গত ৪ দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে চিতলমারি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন বলে জানান।

এবিষয়ে পাশ্ববর্তি কলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিকদার মতিয়ার রহমান বলেন, হিজলা ইউনিয়নের বাবুগঞ্জ বাজার এলাকায় গত ১৫ বছর ধরে এই ‘গোল্ড কয়েন’ চক্র সক্রিয়। আর এর সাথে জড়িত স্থানীয় একটি মহল। তিনি নিজে প্রশাসন ও পুলিশ দিয়ে অনেক চেষ্টা করেও তাদের প্রতিরোধ করতে ব্যার্থ হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, থানা পুলিশেরও বিভিন্ন সময় এই চক্রটিকে সহায়তা করেছে।

হিজলা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আজমীর আলী বলেন, ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই চক্রটি একের পর সোনা বিক্রির নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করেই চলেছে। বিভিন্ন সময় এদের ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশ ধরেছে। কখনও তাদের ছেড়ে দিয়েছে আবার কখনও উপযুক্ত স্বাক্ষ্য প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়ে বের হয়ে অপকর্ম শুরু করেছে। অন্য জেলার মানুষ তাদের কাছে গোল্ড কয়েন কিনতে আসে। ঘটনার সাথে সাথে তাদের পুলিশের ভয় দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তিনি সাড়ে ৭ বছর আগে ঝিনাইদয়ের এক লোকের কিছু টাকা আদাই করে দিয়েছিলেন। সবাই এই চক্রের কাছে অসহায় হয়ে যায় বলে তিনি জানান।

এবিষয়ে চিতলমরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মীর শরিফুল হক জানান, চিতলমারী-নাজিরপুর সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন চক্র সক্রিয়। তিনি এই থানায় যোগদানের পর চক্রগুলো দমনে কাজ করে যাচ্ছেন। অভিযোগের পর অভিযুক্তদের আটকের জন্য পুলিশী অভিযান অব্যহত রয়েছে।