1

গুদামে পন্য ঢোকেনি তবুও সাপ্লাই বাবদ ৩২ কোটি টাকা পরিশোধ

জন্ম নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার্য ডাবল রড ইমপ্ল্যান্ট (ডাবল কাঠি) কেনা হয়েছিল। পণ্যটি সরকারের গুদামে ঢোকেনি, তবু এর সাপ্লাই বাবদ ৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়ে গেছে। বিস্ময়কর এ কাজটি গত জুন মাসে করেছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার। মাল বুঝে পাওয়ার আগেই নিয়মনীতির পরোয়া না করে বিল দিয়ে দেওয়ার কারণে অধিদফতরের লোকেরা ডিজি সারোয়ারকে নাম দিয়েছেন ‘মহাউদার’।

বিস্ময়কর ঘটনা আরও আছে। সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের সরকারি ক্রয় নীতিমালায় বলা আছে- এক কোটি টাকার বেশি মূল্যের পণ্য কিনতে হলে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে; ২০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের কেনা হলে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। ডাবল রড ইমপ্ল্যান্ট কেনার ক্ষেত্রে এই নীতিমালাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রের জন্য প্রযোজ্য সময়সীমাকেও উপেক্ষা করা হয়েছে। যেখানে ৪২ দিনের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার নিয়ম, সেখানে ৩০ দিনের মধ্যে দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে কার্যাদেশ দেওয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার গত জুন মাসে তড়িঘড়ি করে দুই লাখ ৫৫ হাজার ২৪৫টি সিঙ্গেল রড ইমপ্ল্যান্ট (এক কাঠি) আমদানির জন্য ২১ মে দরপত্র আহ্বান করেন। ২০ জুন তা উন্মুক্ত করা হয়। আর সরকারের পিপিআর ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের লঙ্ঘন করে ৩০ জুনের মধ্যে মাল সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সরবরাহ করতে সাপ্লাইয়ার প্রতিষ্ঠানের সময় লাগার কথা ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ। এলসি খোলা ও শিপমেন্টেই এই সময় লাগার কথা। অথচ ওই মালামাল সরবরাহের আগেই বিদায়ী মহাপরিচালক ২৭ জুন সংশ্লিষ্ট সাপ্লাইয়ারকে ৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেছেন।

সূত্র জানায়, যে পণ্যটি কেনা হয়েছে অধিদফতরের কাছে তার বিপুল পরিমাণ মজুদ রয়েছে। এই মজুদ দিয়ে সামনের দুই বছর পর্যন্ত চলত। প্রশ্ন উঠেছে, তা সত্ত্বেও কেন এই বিপুল পরিমাণ সরবরাহ আবার নেওয়া হলো? যার জবাব দেওয়ার কথা সেই মহাপরিচালক তো অবসরে চলে গেছেন। জানা গেছে, ইতিপূর্বে গত বছরের অক্টোবরে একই প্রতিষ্ঠানের (প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনহীন) মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূতভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাবল কাঠি ক্রয় করেছিলেন ডিজি মোস্তফা সারোয়ার। ওই সময় তার বিরুদ্ধে জন্ম নিয়ন্ত্রণের এই পণ্য ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটি প্রধান (যুগ্ম সচিব) পদমর্যাদায় ডিজির (অতিরিক্ত সচিব) নিচে হওয়ায় তদন্তটি যথাযথভাবে হয়নি। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনও তদন্ত করছে।