1

গভীর রাতে সৌদি পৌঁছেছেন মোদি, হতে পারে ১২টি চুক্তি স্বাক্ষর

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দু’দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার গভীর রাতে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এই সফরে দু’দেশের মধ্যে অন্তত বারোটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মধ্যে প্রধান হলো একটি ভারত-সৌদি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিল গঠন। সৌদি আরব তাদের ভিশন-২০৩০ কর্মসূচিতে বিশ্বের যে আটটি দেশের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে, তারও অন্যতম হচ্ছে ভারত।

অথচ পাকিস্তান চিরাচরিতভাবেই নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত, তা সত্ত্বেও তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত কেন আর কীভাবে সৌদিদের সঙ্গে এধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছে? বহু বছর ধরে সৌদি আরবের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা মূলত তেলের কারণে, কারণ ভারত যে ক্রুড বা অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে তার প্রায় কুড়ি শতাংশই আসে সৌদি আরব থেকে।
সে দেশে কর্মরত ভারতীয়র সংখ্যা চল্লিশ লাখেরও ওপর, তারা প্রতি বছর দেশে রেমিট্যান্স পাঠান ১১শো কোটি ডলারেরও বেশি। কিন্তু সৌদিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আউসাফ সাঈদ বলছেন, সাম্প্রতিককালে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটা গুণগত উত্তরণ ঘটেছে। তিনি জানাচ্ছেন, “গত এক দশকে, বিশেষত শেষ চার-পাঁচ বছরে, দুই দেশই স্থির করেছে যে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে এই সম্পর্ককে একটা স্ট্র্যাটেজিক মাত্রা দিতে হবে।”

“আর এর মধ্যে শুধু তেল নয়, নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা থেকে শুরু করে বিনিয়োগ, কৃষি – সব কিছুই থাকবে।” রাষ্ট্রদূত সাঈদ আরও জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে দুদেশের মধ্যে ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিল’ গঠনকে, যার ভিত তৈরি হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বা এমবিএসের ভারত সফরের সময়ই।

এই কাউন্সিলের শীর্ষে থাকবেন মোদী ও এমবিএস, তা ছাড়া দুদেশের ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা এই পরিষদের সমান্তরাল দুটি ভার্টিকলের নেতৃত্ব দেবেন। বিশ্বের বাছাই করা কয়েকটি দেশের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে সৌদি বছরদুয়েক আগে এসসিআইএসপি (দ্য সৌদি সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক ইন্টারন্যাশনাল পার্টনারশিপ) নামে রিয়াদে যে সেন্টারটি গড়ে তুলেছে, তাদের ওয়েবসাইটেও ভারতকে অন্যতম প্রধান ‘টার্গেট দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সৌদির এই সেন্টারের প্রোমোশনাল ভিডিওতেও আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টি, ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার, ব্রিটেনের বিগ বেনের পাশাপাশি ভারতের তাজমহলই শুধু জায়গা করে নিয়েছে। মাস্টারকার্ড ও ভিসা-র বিকল্প হিসেবে ভারত সম্প্রতি ‘রুপে’ নামে যে পেমেন্ট গেটওয়েটি চালু করেছে, এখন সৌদি আরব তাদের দরজা খুলে দিচ্ছে সেই রুপে-র জন্যও। এমন কী, ভারত-শাসিত কাশ্মীরের প্রধান কৃষিপণ্য কাশ্মীরি আপেলের বিরাট বাজারও এখন সৌদি।

কিন্তু ভারতের সঙ্গে এই ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা কি সৌদি আরব-পাকিস্তান সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলছে না? রিয়াদে প্রায় দশ বছর ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসা তালমিজ আহমেদ বিবিসিকে বলছিলেন, “আসলে ২০০৮য়ে মুম্বাইয়ে জঙ্গী হামলার পর থেকেই এই সম্পর্কে একটা নাটকীয় মোড় এসেছে। কাশ্মীর ইস্যুর সঙ্গে যার কোনও সম্পর্কও নেই।” “সৌদির শীর্ষ নেতৃত্ব অনুধাবন করেছেন, পাকিস্তান থেকে উগ্রপন্থা বা জিহাদের উৎপত্তির একটা বিরাট ঝুঁকি আছে – যা সীমান্ত মানে না।”

“আজ ভারত আক্রান্ত হলে কাল তারাও হতে পারে, ভারতের মতো তাদেরও সুদীর্ঘ সমুদ্রতট আছে – আর করাচি থেকে সৌদি উপকূলও খুব দূরে নয়।” “এরপরই কিন্তু ভারত ও সৌদি মিলে রিয়াদ ঘোষণাপত্র জারি করেছিল, সন্ত্রাসবাদ-দমন যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।” সাবেক এই কূটনীতিবিদ অবশ্য এটাও স্বীকার করেন চিরাচরিতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গেও সৌদির খুব নিবিড় সম্পর্ক আছে, কিন্তু তার মতে ভারত-সৌদি সম্পর্কের সঙ্গে তার কোনও বিরোধ নেই।

তালমিজ আহমেদের কথায়, “হ্যাঁ, ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানেরও সে দেশে একটি নিজস্ব ভূমিকা আছে, সেই শীতল যুদ্ধের সময় বা তারও আগে থেকেই।” “তারা সৌদি শাসকদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে ইত্যাদি – কিন্তু সেগুলোতে ভারত উৎসাহীও নয়। সৌদি আরবে ভারতের ভূমিকা পুরোপুরি কূটনৈতিক।”

ফলে নরেন্দ্র মোদী ও এমবিএস আগামিকাল (মঙ্গলবার) যখন রিয়াদে মিলিত হবেন, সেখানে তাই কাশ্মীরের কোনও ছায়া পড়বে না দিল্লি সে ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে হ্যাঁ, নরেন্দ্র মোদীকে সৌদি যেতে হবে অন্তত সাড়ে তিন ঘন্টা ঘুরপথে – কারণ কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিতে আবারও অস্বীকার করেছে।