1

খুলনায় ২৮টি হাটে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু উঠলেও ক্রেতা কম

সাতক্ষিরার দেবহাটা উপজেলা থেকে ব্যাপারি শাহীন গাজী ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন খুলনা-সাতক্ষিরা মহাসড়কের পাশে খর্ণিয়া হাটে। গত তিন দিনে একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। তবুও শেষ মুহুর্তের অপেক্ষায় আছেন তিনি।

ব্যাপারি শাহীন জানান, মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরু হলেও তিনি একদিন আগে এসে জায়গা বরাদ্দ নিয়ে খাটাল তেরী করেছেন। তিনি বলেন, ক্রেতারা দুই এক জন আসছেন ঠিকই তবে দরদাম করেই চলে যাচ্ছেন। এর মধ্যে আবার বৃষ্টির বাগড়া। হাটে ক্রেতা কম থাকায় কিছুটা হতাশ দেখা গেল তাকে।

গত মঙ্গলবার থেকে খুলনা জেলায় ২৮টি স্থানে কোরবানির পশুহাট বসেছে। খুলনা মহানগরের পাশাপাশি ৯ উপজেলায় এসব হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে জেলার ৯টি উপজেলায় ২৭টি ও মহানগরে একটি কোরবানির পশুর হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের আয়োজনে নগরের জোড়াগেট এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসেছে মঙ্গলবার থেকে। এটি খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় ও মহানগরের একমাত্র কোরবানির পশুর হাট। এ হাট চলবে ঈদের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত। অনেক জায়গায় কয়েক দিন আগ থেকেই শুরু হয়েছে পশু কেনাবেচা।
নগরীর জোড়াগেট এলাকার কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পশু আমদানী হয়েছে হাটে। সে তুলনায় ক্রেতা নেই। হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারিরা জানিয়েছেন, গত দু’দিনে বৃষ্টির কারণে পশু বেঁচা কেনা শুরু করতেই পারেননি তারা। হাটে যদিও কিছু ক্রেতারা আনাগোনা দেখা যাচ্ছে তাদের বেশির ভাগ এসেছেন দর দাম করতে। সেখানে আসা কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, কোরবানির ঈদের আরও কয়েক যেহেতু হাতে আছে, সে কারণে বিভিন্ন হাট দেখে বুঝেই তবে গরু কিনবেন তারা। আব্দুল আজিজ নামে একজন ক্রেতা বলেন, এবার হাটে পর্যাপ্ত পশু আসছে। আবার ব্যাপারিরা দামও হাকাচ্ছেন বেশ। তবে শেষ দিকে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কয়েকটি হাট দেখেশুনেই এবার কোরবানির পশু কিনবো বলে ভাবছি।

এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর খুলনায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু পালন করা হয়েছে ৫১ হাজার ২৯৪টি। কিন্তু জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৪ হাজার ৭২৫টি। সে হিসাবে, জেলায় গবাদিপশুর ঘাটতি রয়েছে ৩৩ হাজার ৪৩১টি। গত বছর জেলায় কোরবানি করা হয়েছিল ৮৪ হাজার পশু। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছরই এমন ঘাটতি থাকেই। আর ওই ঘাটতি পূরণ হয় যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা গবাদিপশু দিয়ে। ফলে কোনো বছরই জেলায় কোরবানির সময় গবাদিপশুর ঘাটতি হয় না।

হাটে আসা ক্রেতাদের অনেকেই জানান, গতবার শেষ মুহূর্তে খুলনা নগরে পশুর হাটে গরুর সংকট দেখা দিয়েছিল। ঈদের আগের দিন রাতে অনেক বেশি দাম দিয়ে ছোট ছোট গরু কিনে কোরবানি করতে হয়েছিল অনেকেরই। তাই এবার অনেকেই আগে ভাগে গরু কিনতে চাইছেন। তবে দামের কারনে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন।

গত বছর জেলায় যে পরিমাণে গবাদিপশু পালন করা হয়েছিল, এ বছর তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে। ধীরে ধীরে উৎপাদনের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে, প্রতিবছর খুলনায় কোরবানির পশুর চাহিদা বাড়ছে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে।

প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এ বছর খুলনায় কোরবানিতে গরুর চাহিদা রয়েছে ৪৫ হাজার ৭০০টি। এর বিপরীতে জেলায় পালন করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৪১টি গরু। আর জেলায় ২৫টি মহিষের চাহিদা রয়েছে। তার বিপরীতে কোরবানিযোগ্য কোনো মহিষ পালন করা হয়নি। ৩৮ হাজার ছাগলের চাহিদার বিপরীতে মজুত আছে ১৫ হাজার ১০৮টি। তবে এক হাজার ভেড়ার চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত আছে ২৪৫টি। তবে স্থানীয় পশুর হাট ঘুরে পর্যাপ্ত পশু দেখা দেখা গেছে। সে তুলনায় ক্রেতা সমাগম ঘটেনি এখনও। শেষ মুহুর্তে হয়তো ব্যাপক ক্রেতা সমাগম হতে পারে বলে ধারনা করছেন হাটে আসা ব্যাপারিরা।

খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, জেলার উপকূলীয় কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ তিনটি উপজেলায় পশুর উৎপাদন কম হলেও এসব এলাকায় মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোরসহ অন্যান্য জেলা থেকে কোরবানির সময় পশু এনে হাটগুলোতে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। ফলে হাটে পশুর সংকট হয়না কখনও। এবারও পর্যাপ্ত পশু এসব হাটগুলোতে এসেছে। বর্তমানে বিক্রেতার চাইতে ক্রেতা কম দেখা গেলেও শেষ মূহুর্তে সব পশু বিক্রি হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয় ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ফুলতলা উপজেলায় বসবে দুটি পশুহাট। এর মধ্যে একটি স্থায়ী ও অন্যটি অস্থায়ী। দিঘলিয়া উপজেলায় বসেছে চারটি পশুর হাট। আর তেরখাদা, রূপসা ও দাকোপ উপজেলায় হাট বসেছে দুটি করে। কয়রা ও ডুমুরিয়ায় তিনটি করে। এ ছাড়া পাইকগাছায় পাঁচটি ও বটিয়াঘাটায় চারটি পশুর হাটে কোরবানির পশু মজুদ করা হয়েছে।