1

খুলনায় রেলওয়ের দখলি জমিতে কাউন্সিলরদের বস্তি

খুলনায় রেলওয়ের জমি দখল করে বস্তি ও আবাসন প্রকল্প গড়েছে অবৈধ দখলদাররা। নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ঘাট ও জোড়াগেট এলাকায় রেলওয়ের প্রায় চার একর জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে বস্তি। এ বস্তিতে বাস করছে প্রায় তিন হাজার পরিবার। তাদের কাছ থেকে ভাড়া তুলে ভাগবাটোয়ারা করে নেন স্থানীয় রাজনীতিকরা। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় ভাড়া আদায়কারী। রাজনৈতিক দলের বাধায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, ২০০২ সালে ঘাট এলাকায় রেলের জমিতে বস্তি তৈরি করেন তৎকালীন বিএনপি নেতারা। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দলটির স্থানীয় নেতারা এ বস্তির দখল নেন। এ বস্তি রাজনৈতিক দলের ‘ভোটের ডিপো’। বস্তিবাসীর ভোটের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিরা দখলদারদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এভাবেই গড়ে উঠেছে খুলনার সবচেয়ে বড় বস্তি গ্রিনল্যান্ড আবাসন প্রকল্প।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাট ও আশপাশ এলাকা থেকে নগরীর জোড়াগেট পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বস্তি তৈরি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় বস্তির নাম ‘গ্রিনল্যান্ড আবাসন’। নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন এ আবাসন প্রকল্পের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।

এ ছাড়া ৬ নম্বর ঘাটের কাছে বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে বালি রেখে ব্যবসা করছেন প্রভাবশালীরা। সবচেয়ে বড় অংশ রয়েছে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাসের দখলে। বাকিরা ছোট পরিসরে মালপত্র রেখে ব্যবসা করছেন। রেলের ১৮ নম্বর কানুনগো অফিস জানিয়েছে, খুলনা রেলস্টেশনে রেলওয়ের জমির পরিমাণ ১৯৫ দশমিক ৪৪ একর। এর মধ্যে নিজস্ব কাজে ব্যবহূত হচ্ছে ১৫৬ দশমিক ৬৩ একর জমি। বিভিন্ন ভাগে লাইসেন্স দেওয়ার পর পতিত রয়েছে ১৪ দশমিক ৮২ একর জমি। এর মধ্যে ৭ দশমিক ১৫ একর জমি রয়েছে অবৈধ দখলে। এ ছাড়া খুলনা জংশনের আওতায় জোড়াগেট পর্যন্ত রেলওয়ের জমি আছে ১৭৪ দশমিক ৫২ একর। এর মধ্যে অবৈধ দখলে আছে ২ দশমিক ০১ একর।

রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগ জানিয়েছে, নগরীর জোড়াগেট এলাকায় রেলওয়ের ৩ একর জায়গাজুড়ে কাঁচাবাজার তৈরি করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এ জমি নিয়ে মামলা চলছে। কাঁচাবাজারের পাশেই রেলের জমিতে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আকারে ছোট হওয়ায় এগুলো থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারে না রেলওয়ে।

রেলওয়ের জমি দখল করে বস্তি বানানো প্রসঙ্গে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন বলেন, ২০০২ সালে প্রথম গ্রিনল্যান্ড বস্তি গড়ে তোলা হয়। তখন বিএনপি নেতা ও সিটি মেয়র তৈয়েবুর রহমান ছিলেন এর প্রধান উদ্যোক্তা। ২০০৮ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ভোটারদের প্রতি দায় থেকে বস্তির উন্নয়ন করেছেন।

তিনি দাবি করেন, আগে এ বস্তিতে ২২ জন শীর্ষ মাদক বিক্রেতা ছিল। তাদের সবাইকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, যারা প্রকৃত ভূমিহীন তারাই এখন বস্তিতে থাকেন। তার দাবি, এ বস্তিতে কাউকে ভাড়া দিয়ে থাকতে হয় না। তবে বস্তিবাসীরা জানিয়েছেন, ঘরপ্রতি এক থেকে দুই হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন তারা।

১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাসের দাবি, তিনি জমি দখল করেননি। রেলে পতিত জমিতে সামান্য কিছু মালপত্র রেখেছেন। জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন।

রেলওয়ের স্থানীয় ১৮নং কাচারির কানুনগো মোতাহার হোসেন বলেন, বস্তি ও আবাসনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই জমি দখল করে আছে। নানা কারণে তাদের উচ্ছেদ বা এসব জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না।