খুলনার দুই পৌরসভার কার্যক্রমে স্থবিরতা
খুলনার পাইকগাছা ও চালনার পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনের কারণে নিজ নিজ দপ্তরে অনুপস্থিত থাকায় সব কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে সেবাবঞ্চিত হয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পৌর এলাকার বাসিন্দারা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন-ভাতা প্রদান, পেনশন চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে ১৪ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে একদিকে দাপ্তরিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে এলাকার রাস্তাঘাট ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। সেইসঙ্গে সড়ক বাতিগুলো বন্ধ রাখায় রাতে চলাচলে দুর্ভোগে পোহাচ্ছে
মানুষ।
পাইকগাছা পৌরসভার মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, আন্দোলন এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে আমাদের বিকল্প খোঁজা ছাড়া উপায় থাকবে না। এ জন্য আলোচনা চলছে।
গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পাইকগাছা পৌরসভা কার্যালয় বন্ধ থাকায় কোনো দাপ্তরিক কাজ হচ্ছে না। সেখানে সেবা নিতে আসা লোকজনকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। কার্যালয়ের তালা বন্ধ থাকতে দেখে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পাইকগাছা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নার্গিস বেগম এসেছিলেন তার নাতির জন্মনিবন্ধন করাতে। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে এ অফিসে আসছি; কিন্তু প্রত্যেকবার দেখি তালাবন্ধ। কবে খুলবে তা কেউ বলেন না।
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ এসেছিলেন নাগরিক সনদপত্র নিতে। কার্যালয় বন্ধ থাকতে দেখে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় কারও কাম্য নয়। আমরা নিয়মিত পৌর কর দিয়ে থাকি। আমরা কেন তাদের কারণে ভোগান্তি পোহাব।’
পৌর এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদুল হোসেন, মো. আকবর আলী ও ওসমান গণি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে জমি খারিজের জন্য পৌরসভা থেকে ওয়ারিশ কায়েম সনদপত্র দরকার; কিন্তু পৌর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সনদপত্র নিতে পারছি না।
পাইকগাছা পৌরসভার সচিব মো. লিয়াকত আলী জানান, ধর্মঘট চলায় পৌরসভার ১৭ স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, আন্দোলনের কারণে পৌরবাসীর সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে ঠিক; কিন্তু আমরা নিরুপায় হয়ে আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ফিরব না।
খুলনা জেলা পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
প্রায় একই রকম ভোগান্তিতে পড়েছেন দাকোপ উপজেলার চালনা পৌরসভার বাসিন্দারা। গতকাল রোববার চালনা বাজারের মুদি দোকানি অনুপ মণ্ডল বলেন, সম্প্রতি আমি ব্যবসা শুরু করেছি। ব্যবসার জন্য ব্যাংক ঋণ প্রয়োজন, আর ব্যাংক ঋণের জন্য পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স দরকার। পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আমি দুই সপ্তাহ ধরে দৌড়াদৌড়ি করছি, কিন্তু ধর্মঘট চলায় লাইসেন্স পাইনি।
চালনার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল খালেক গাজী বলেন, তার স্ত্রী নয় দিন আগে সন্তান প্রসব করেন। ছেলের জন্মনিবন্ধনের জন্য পৌরসভায় পাঁচ-ছয় দিন ঘোরাঘুরি করলেও জন্ম নিবন্ধন করাতে পারিনি।
এক ঠিকাদার বলেন, তিনি সম্প্রতি একটি ওয়ার্ডে রাস্তার কাজ করেছেন। এখন তার বিল পাচ্ছেন না।
চালনা পৌরসভার সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন পৌরসভা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পৌরবাসীকে কোনো সেবা প্রদান করছেন না।
চালনা পৌর মেয়র সনৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে নানা উন্নয়নকাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। পৌরবাসীও নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।