1

কাশ্মীরে দমন-পীড়ন: ‘বিব্রত’ ভারতীয় কর্মকর্তার পদত্যাগ

সম্প্রতি ভারতীয় সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন বাতিল ও জম্মু-কাশ্মীরে দমন-নিপীড়নের ঘটনায় ‘বিব্রত’ এক ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবা (আইএএস) কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের লোকদের ‘মৌলিক অধিকার’ খর্ব করা তার পদত্যাগের অন্যতম কারণ বলে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন আইএএস কমকর্তা কান্নান গোপীনাথন।

নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতীয় সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেয়ার পর এই প্রথম কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করে প্রতিবাদ জানালেন।
বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন কান্নান। বর্তমানে দাদ্রা নগর হাভেলি পোস্টিং ছিলেন তিনি।

আইএএস অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন কান্নান। পদত্যাগের কারণ জানিয়ে টুইটও করেছেন কান্নান।

জম্মু-কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করে তিনি লেখেন- ‘ভেবেছিলাম সিভিল সার্ভিসে যোগদান করে মানুষের বক্তব্য তুলে ধরতে পারব। মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করব। কথা বলতে পারব। কিন্তু এখন দেখছি আমার কণ্ঠই রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

পদত্যাগের পর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি লেখেন- ‘আমি স্বরাষ্ট্র সচিব বা অর্থসচিব নই। আমার পদত্যাগে পরিস্থিতির বদল হবে না। কিন্তু আমার বিবেক স্বচ্ছ।’

কান্নানের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার এক সহকর্মী বলেছেন, ‘কাশ্মীরের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ও অস্বস্তিতে থাকতেন কান্নান। তিনি বরাবরই বলতেন, মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ার অর্থ জরুরি অবস্থা জারি হওয়া। কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি আমি মেনে নিতে পারছি না।’

এদিকে, ৩৭০ ধারা বাতিল ও কাশ্মীরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চলা দমন-পীড়নের প্রতিবাদে কান্নানের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন অনেক ভারতীয়।

কান্নানকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যায়িত করে টুইটারে সমালোচনা করছেন কেউ কেউ। ইতিবাচক টুইটও জমা পড়ছে অনেক। কান্নানের পাশে দাঁড়িয়েছেন কেউ কেউ।

সাবেক আইএএস অনিল স্বরূপ বলেন, ‘কান্নানের মতো অফিসারদের নিয়ে আমরা গর্বিত।’

তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে কী বলা হচ্ছে, তাতে নজর দিচ্ছেন না কান্নান। তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থে আমি দেশবিরোধী তকমা সহ্য করতে রাজি আছি। আমি সবসময় ন্যায়ের পক্ষে। মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব যেখানে হবে, সেখানে আমার অবস্থান বিপরীতই থাকবে।’

গত ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে মোদি সরকার। এতে বিশেষ মর্যাদা হারায় ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর।

এ অনুচ্ছেদ বহাল রাখতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কাশ্মীর ও লাদাখজুড়ে। বিক্ষোভ বানচাল করতে ১৪৪ ধারা জারিসহ ভারতনিয়ন্ত্রিত গোটা কাশ্মীরকে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় ভারত প্রশাসন। টেলিফোন, ইন্টারনেট সংযোগসহ যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয় কাশ্মীরি জনতার জন্য।