1

কাশ্মীরিরা বন্দী বাড়িতে, পুরো উপত্যকা যেন কারাগার

মোদি সরকার ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হাজার হাজার মানুষ এখন বন্দী তাদের নিজ বাড়িতে। তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত ও কারফিউ পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেখানে।

রশিদ আলী নামের শ্রীনগরের এক ওষুধের দোকানদার বিবিসিকে বলেন, পুরো উপত্যকা এখন একটি কারাগারের মতো। বাধা নিষেধ উঠে গেলেই মানুষ রাস্তায় নামবে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে এখন হাজার হাজার অতিরিক্ত সেনা অবস্থান করছে। মার্কেট ও স্কুল কলেজ বন্ধ এবং চারজনের বেশি লোকের কোথাও সমবেত হওয়া নিষিদ্ধ, এমনকি স্থানীয় নেতাদেরও আটক করা হয়েছে।

মূলত স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে বড় ধরনের প্রতিবাদ হতে পারে আশঙ্কা থেকেই এমন সব ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত সরকার। পুরো অঞ্চল থেকেই প্রথম যে কণ্ঠ আসছে এবং বাকিরাও তাতে একমত, আর তা হলো: বিশ্বাসঘাতকতা ও অবিশ্বাস।

অসিম আব্বাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, আমাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার পরিণতি হবে বিপজ্জনক। এটা আমাদের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকেই মনে করিয়ে দেয়।

কাশ্মীরের অনেকেই বিশ্বাস করেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি কাশ্মীরের বাইরের মানুষদের সেখানে জমি কেনার অধিকার দিয়ে সেখানকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্যকেই পাল্টে দিতে চায়।

বিশেষ মর্যাদার মাধ্যমে কাশ্মীর সম্পদের মালিকানা ও মৌলিক অধিকারের বিষয়ে নিজেরাই নীতি প্রণয়ন করতে পারতো। এমনকি রাজ্যের বাইরের কারও সেখানে জমি কেনাও নিষিদ্ধ ছিল।

কাশ্মীরীদের এমনকি নিজেদের সংবিধান, আলাদা পতাকা ও আইন প্রণয়নের স্বাধীনতা ছিলো। শুধু পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।

কিন্তু এখন সব পাল্টে গেছে কারণ বিজেপি মনে করছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে জম্মু কাশ্মীরের আর আলাদা মর্যাদার দরকার নেই। অথচ কাশ্মীরের মানুষ তাদের বিশেষ অধিকার হারানোর বিষয়ে আগে থেকে জানতেই পারেনি।

যখন পর্যটকদের চলে যেতে বলা হলো ও হিন্দু তীর্থযাত্রীদের যাত্রা বাতিল করা হলো তখন অনেকে ভেবেছিল জঙ্গি হামলার হুমকির কথা।তখনো জানা যায়নি যে, সরকার আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পরিকল্পনা করেছে। একই সাথে ভাগ করা হয়েছে কাশ্মীরকে। এসব কারণেই অবিশ্বাস থেকে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে অনেকে কাশ্মীরীর মনে।

মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিবাদ বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। ‌‘ভারত ফিরে যাও, কাশ্মীর আমাদের’ এমন স্লোগান হয়েছে সেখানে, যদিও কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।

অসিম আব্বাস বলেন, মনে হচ্ছে পাথরের যুগে ফিরে গেছি। বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে আমাদের। ইকবাল নামে আরেকজন বলেন, সরকার কাশ্মীরের জমি চায় কিন্তু কাশ্মীরের জনগণকে চাইছে না। কাশ্মীরিরা ক্ষুধার্থ নাকি মরে গেছে তা নিয়ে তাদের চিন্তা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, কাশ্মীর তার স্বাধীনতা হারিয়েছে ও ভারতের দাসত্বে চলে গেছ বলেই মনে হচ্ছে। বারামুলার অধিবাসী আব্দুল খালিক নজর বলেন, এটা তারা ১৫ আগস্টের পরই করতে পারতো। সামনে আমাদের ঈদ।

কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রাস্তাঘাট এখনো আটকে রাখা হয়েছে। চেকপয়েন্টগুলোতে পুলিশ ও সশস্ত্র আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। চলাচল খুবই সীমিত।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা অবশ্য কয়েকদিনের মধ্যে বিধিনিষেধ কমিয়ে আনার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবাও চালু হবে।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের স্যাটেলাইট ফোন দেয়া হয়েছে। কাশ্মীরের বাইরে থাকা কাশ্মীরিরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না।

চেন্নাইতে থাকা একজন শিক্ষার্থী বলেন, গত ২৫ বছরে তিনি কখনো ল্যান্ডফোন বন্ধ করতে দেখেননি। আমি জানি না আমার পরিবার কেমন আছে।

পর্যটক ও কাজ করতে আসা শ্রমিকরা সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য রীতিমত সংগ্রাম করছেন। টিকেট বুকিংয়ের জন্য ইন্টারনেট নেই। কেউ কেউ বিমানবন্দর ও বাস স্টেশনে পৌঁছতে পারলেও লোকজন পাননি।

কেউই জানেনা কখন ও কিভাবে এ পরিস্থিতির অবসান হবে। কেউ কেউ উল্লাস করছে জম্মু ও কাশ্মীরকে এক করায়। আবার কেউ প্রশ্ন করছে, এতোই যদি আনন্দের ঘটনা হয় তাহলে সব বিচ্ছিন্ন কেন এবং মৌলিক অধিকারই বা ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে কেনো?