1

ওজন কমানো ও সুস্থ্য থাকতে ডা. জাহাঙ্গীর কবীরের পরামর্শ

সময় পরিক্রমার সাথে তাল মিলিয়ে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগ। তাই সুস্থ থাকতে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন শরীরের ওজন ঠিক রাখার। কিন্তু অনেক সময় ওজন কমানোরা জন্য আমার ব্যয়ামসহ অনেক কিছু করি, না খেয়ে থাকি। এরপরও কমে না ওজন।

তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতে ও সুস্থ থাকার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর। যা নিয়মিত পালনে মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল।

সকালের নাস্তা :

খুব সকালে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আটটা বা সাড়ে আটটার দিকে দুধ চিনি ছাড়া এক কাপ চা (আদা, লেবু সামান্য লবণ দেয়া যেতে পারে) খেয়ে নিন। কুসুম গরম পানির সাথে অ্যাপেল সিডার বা কোকনাট ভিনেগার খেতে পারেন এবং কুসুম গরম পানির সাথে লেবু চিপে খেতে পারেন। আর যারা দেরিতে নাস্তা করেন তারা এগারোটার দিকে নাস্তা করবেন এবং দুপুরের খাবার আড়াইটা তিনটায় খাবেন। আর সকাল আটটায় নাস্তা খেলে দেড়টার ভেতর দুপুরের খাবার খেতে হবে।

দুপুরের খাবার :

দুপুরের খাওয়ার আগে অবশ্যই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক চামচ এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন। এতে করে গ্যাসের সমস্যা হবে না এবং চর্বি কাটতে সাহায্য করবে। শাক, সবজি অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েল দিয়ে রান্না করবেন এবং মাছ ভাজলে (ডিপ ফ্রাই থেকে বিরত থাকবেন এতে খাদ্যগুণ নস্ট হয়) বা রান্না করলে এই তেল দিয়েই করবেন।

সবজি যতটুকু সম্ভব কম সেদ্ধ করবেন। যেন সবজির গুণগত মান ঠিক থাকে। ডিম কুসুমসহ ঘি বা মাখন দিয়ে ভেজে খাবেন। এক দিনে সর্বোচ্চ ছয়টা ডিম কুসুমসহ খেতে পারবেন কোন সমস্যা নেই। কারণ ডিম প্রোটিন এবং ভালো ফ্যাটের উৎস। তবে একবার ফ্যাট এ্যাডাপটেশন হয়ে গেলে চাইলেও এত খেতে পারবেন না। দেশি মুরগি খেতে পারেন, এক দুই টুকরো অথবা উল্লিখিত গরুর মাংস। মাছ খেলে মাংস খাবেন না। মাংস খেলে মাছ খাবেন না।

প্রবাসীরা ফার্মের মুরগি এক টুকরো করে খেতে পারেন। কারণ আমার জানা মতে সেখানে ফার্মের মুরগিকে আদর্শ খাবার খাওয়ানো হয় (যদিও ফার্মের মুরগি ব্যায়াম করে না যেটা দেশি মুরগি করে)। দুম্বা, উট, ভেড়ার, মাংস খেলে এক টুকরোর বেশি নয়। দুপুরের ম্যানুতে শাক, সবজি মাছ অথবা মাংস, ঘি’এ ভাজা ডিম, বাদামের সাথে বাটার রাখতে পারেন। অবশ্যই শসা বা শসার সালাদ রাখবেন সঙ্গে টমেটো, গাজর।

বিকেলে হালকা নাস্তা :

বিকেলে ক্ষুধা লাগলে উপরে উল্লেখিত চা, বাটার কফি এবং যে কোনো প্রকার মাখন বা ঘি দিয়ে ভাজা বা মেশানো বাদাম খাবেন।

রাতের খাবার :

রাতের খাবারের পূর্বেও ভিনেগার মিশ্রিত এক গ্লাস পানি খেয়ে নিবেন এবং রাতের খাবার দুপুরের অনুরূপ খাবেন। আইটেম দুই একটা কম বেশি হলেও কোনো সমস্যা নেই। রাত আটটার আগেই সমস্ত খাবার শেষ করুন। এরপর আর পানি ছাড়া কিছুই খাবেন না।

যে সব খাবার খাওয়া যাবে না :

১. চালের তৈরি সব কিছু। যেমন- ভাত, চাউলের রুটি এবং চাল দিয়ে বানানো অন্যান্য খাবার।

২. গম দিয়ে তৈরি করা খাবার। যেমন- রুটি, পাওরুটি, যে কোন প্রকার বিস্কুট এবং গম দিয়ে বানানো অন্য খাবার।

৩. যে কোনো প্রকার ডাল।

৪. আলু, মিষ্টি আলু, গাছ আলু বা আলু সাদৃশ্য অন্যান্য আলু, যা শর্করা জাতীয় সবজি যেমন- মূলা।

৫. চিনি এবং চিনি দিয়ে বানানো সব ধরণের খাবার।

৬. দই, টক দই, দুধ এবং সরাসরি দুধ দিয়ে তৈরি করা খাবার।

৭. মধু এবং মিষ্টি ফলমূল খাওয়া যাবে না।

৮. সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, রাইস ব্যান ওয়েন, ক্যানোলা ওয়েল এবং সাধারণ কোনো তেলে রান্না করা কিছু খাওয়া যাবে না।

৯. ফ্রার্মের মুরগি, যে মুরগি গুলো টেনারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য খাওয়ানো হয়।

১০. ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মোটা তাজা করা হয় এমন গরু বা খাসির মাংস।

যেগুলো খাওয়া যাবে :

১. সবুজ শাক, সবজি। তবে গাজর ও কচি সবুজ মিষ্টি কুমড়া অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে।

২. টক জাতীয় ফল। যেমন- জলপাই, আমলকি। এছাড়াও একটি কচি ডাবের পানি।

৩. যে কোন প্রকার মাছ খেতে পারবেন। তবে তৈলাক্ত দেশিয় মাছের ভেতর পাংগাশ, বোয়াল, ইলিশ, সরপুঁটি, ব্রিগেড, গ্রাসকার্প, বাইম (তৈলাক্ত বা সাগরের মাছ হলে আরো ভালো)।

৪. শুধুমাত্র ঘাস, লতা পাতা বা খড় কুটো খেয়েছে এমন গরু-খাসির মাংস খাওয়া যাবে (বেশি পরিমাণে না)। এছাড়া গরু বা খাসির পায়া খাওয়া যাবে। যেটা খাওয়া এই সময়ে খুবই উপকারি এটাও অল্প পরিমাণে খেতে হবে।

৫. মুরগির ডিম (ফার্ম হলে সমস্যা নেই তবে ওমেগা ৩ বা দেশি মুরগি বা হাঁস হলে বেশি ভালো)। এছাড়া সম্ভব হলে মাছের ডিমও খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

৬. ঘি, অর্গানিক বাটার, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েল, MCT ওয়েল, অর্গানিক Extra Virgin Cold Pressed কোকোনাট ওয়েল।

৭. যে কোনো প্রকার বাদাম। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, অন্যান্য বাদাম যা আছে চাইলে বাদাম ব্লেন্ড করে সাথে উপরে উল্লেখিত নারকেল তেল দিয়ে বানাতে পারেন পিনাট বাটার যেটা খেতে তুলনাহীন। তবে অল্প খাবেন।

৮. দুধ চিনি ছাড়া রং চা বা কফি। সবুজ চায়ের সাথে লেবু, আদা, সামান্য লবণ মেশাতে পারেন। কফির সাথে, MCT ওয়েল, মাখন বা ঘি এবং অর্গানিক কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে বাটার কফি বানিয়ে খেতে পারেন। এতে ভালো কাজ হবে।