বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন




একাধিক নেতাকে মাসে ২৫ কোটি টাকা দিতেন শামীম

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে প্রতি মাসে ২৫ কোটি টাকা দিতেন গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম। যাদের পকেটে এই টাকা যেত, তারা তাকে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তা করতেন। তবে লাভ-ক্ষতি যাই হোক প্রতি মাসে ওই অঙ্কের টাকা দেওয়াটা ছিল বাধ্যতামূলক। জিজ্ঞাসাবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এমন তথ্যই জানিয়েছেন শামীম।

তিনি বলেছেন, নেপথ্যে থেকে কিছু রাজনৈতিক নেতা নিয়মিত তাঁর টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির টাকার ভাগ পেতেন। কার কাছে কীভাবে ওই টাকা পৌঁছে দিতেন তা বিস্তারিত তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে ধরেন। এই তালিকায় মন্ত্রী-এমপিসহ অনেকের নাম রয়েছে। শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে ও তাঁর ফোনের কললিস্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সদস্যরা।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন নির্মাণের ৭৫ কোটি টাকার টেন্ডার জাল কাগজপত্র দাখিল করে হাতিয়ে নেন জি কে শামীম। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জাল কাগজপত্রের প্রমাণ পেয়েছে। জি কে শামীমকে কাজ পাইয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরেই খুন হয়েছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী।

এদিকে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পিয়ন থেকে দপ্তর সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেওয়া কাজী আনিসুর রহমানকে খুঁজছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি যে তালিকা নিয়ে অভিযানে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেখানে তাঁর নাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যা বলেছেন শামীম:গত শুক্রবার রাজধানীর নিকেতনে ব্যবসায়িক কার্যালয় জি কে বিল্ডার্সে অভিযান চালিয়ে জি কে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের (চরভুলুয়া গ্রামের) দক্ষিণপাড়ার মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে তিনি। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিএনপি সরকারের আমলে এক মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন শামীম। এজন্য বিএনপির ওই মন্ত্রীকে তাকে প্রতি মাসে ১০ কোটি টাকা দিতে হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভোল পাল্টিয়ে যুবলীগের পরিচয় ব্যবহার করে একই ব্যবসা চালিয়ে যান তিনি।

শামীম আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীকে ১২শ’ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন। টাকা না দিলে ওই প্রধান প্রকৌশলী বিল আটকে দিতেন। এত টাকা দিয়ে লাভ করবো কীভাবে। এ জন্য অনিয়মের আশ্রয় নেন। আলোচিত জি কে বিল্ডার্স কোম্পানির বালিশকান্ড ঘটানোর পেছনেও এটি অন্যতম কারণ বলে শামীম জানিয়েছেন। তিনি নিজেই কমিশনের অর্থবণ্টন করতেন। অধিকাংশ সময় নগদ টাকা দিতেন। মাঝেমধ্যে শামীমের দু’জন বিশ্বস্ত সহযোগীর মাধ্যমেও কমিশনের টাকা পৌঁছে দেওয়া হতো।

জিজ্ঞাসাবাদে শামীম স্বীকার করেন, ঢাকার বাসাবো ও নিকেতনে তাঁর অন্তত পাঁচটি বাড়ি রয়েছে। রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট আছে। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় তার বাড়ি রয়েছে। শামীম দাবি করেছেন, ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেক শত্রু হয়েছে তাঁর। তাই সব সময় একাধিক অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে চলতেন।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765