1

ইমরান খানের মাথা ব্যথার কারণ কে এই মাওলানা ফজলুর রহমান?

পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরকারের পতনের দাবিতে রাজপথে নেমেছে লাখো জনতা। আজাদ মার্চ নামে ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (জেইউআই-এফ) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান।

সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ইমরান খানের পদত্যাগ এবং পুনরায় নির্বাচন দাবিতে দুর্বার এ আন্দোলন গড়ে তুলে বিশ্বব্যাপী আলোচনা উঠে এসেছেন মাওলানা ফজলুর রহমান।

আজ রবিবারের মধ্যে ইমরানকে পদত্যাগের দুই দিনের (৪৮ ঘণ্টা) আলটিমেটাম দিয়ে রেখেছেন তিনি।

মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ প্রায় সব বিরোধী দলই মাওলানা ফজলুর রহমানের এই আজাদি মার্চে সমর্থন দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে কয়েক লাখ কর্মী-সমর্থক নিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থান করছেন মাওলানা ফজলুর রহমান।

তিনি আল্লামা ইকবাল ও জিন্নাহর স্বপ্নের পাকিস্তান গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানের রাজনীতিতে এমন প্রভাব বিস্তারকারী কে এই মাওলানা ফজলুর রহমান?

কেন তার এই আজাদি আন্দোলনে পাকিস্তান জুড়ে এত লোক সমাগম। কি তার রাজনৈতিক পরিচয়?

মাওলানা ফজলুর রহমানের জন্ম ১৯৫৩ সালের ২১ জুন। পবিত্র ঈদুল আজহার দিন শুক্রবার ডেরা ইসমাঈল খান জেলার আব্দুল খয়েল গ্রামে মুফতি মাহমুদের গৃহে জন্মগ্রহন করেন তিনি।

মুলতানে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৭৩ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাস করেন তিনি। এরপর ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করেন। মুলতানের মাওলানা ক্বারী মুহাম্মদের কাছে কেরাত মশক করেন। এছাড়া দারুল উলূম হক্কানিয়া আকুড়াখটক মাদরাসায় অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা করেন।

রাজনৈতিক জীবন

বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে মাওলানা ফজলুর রহমানের আগমন হয়। ১৯৭৯ সালের ৯ নভেম্বর করাচির খালিকে দুনিয়া হলে মাওলানা প্রথম রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করেন। এই বক্তব্যে তিনি তৎকালিন সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউল হকের রাষ্ট্রপ্রধান পদে চ্যালেঞ্জ করেন।

তার অনলবর্ষী বক্তব্যে অভিভূত হয়ে নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান বলে উঠেন – ‘থামো, এই ভূমি বড়ই উর্বর। পাকিস্তানে অচিরেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।

এসময় নবাবজাদা গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য এম আর ডি গঠন করেন। মাওলানা ফজলুর রহমান এ আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে যান। এরপর থেকে জেলে যাওয়া-আসা শুরু।

১৯৮১ সালে তিনি যখন জেনারেল জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কারাবন্ধি হন তখন তাকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব নির্বাচন করা হয়।

১৯৯৫ সালের ২৮ মার্চ জামেয়া মাদানিয়া করিমপার্কে ৩২৫ সদস্যের অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে জমিয়ত সভাপতি হাফিজুল হাদিস আল্লামা আব্দুলাহ দরখাস্তি এর ইন্তেকালের পর মাওলানা ফজলুর রহমান সভাপতি নির্বাচিত হন।

মাওলানা ফজলুর রহমান রাজনৈতিক মামলায় মোট ১০ বার কারাবরণ করেছেন।

জাতীয় নেতৃত্বে মাওলানা ফজলুর রহমান

মাওলানা ফজলুর রহমান ১৯৮৫ সালের নির্দলীয় ভোট প্রত্যাখান করেন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের পরে বেনজীর ভূট্টো সেনা শাসনকে দাবিয়ে রাখার জন্য গোলাম ইসহাক খানকে রাষ্ট্রপতি মেনে নিলেন।

তিনি রাষ্ট্রপতিকে স্বপদে বহাল রাখার পরিবর্তে খান আব্দুল ওয়ালী খানকে সঙ্গে নিয়ে নবাবজাদা নসরুল্লাহ খানকে রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড় করিয়ে দিলেন।

১৯৯৩ সনে বেনজীর ভূট্টো দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে মাওলানা ফজলুর রহমান জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে যখন বেনজীর ক্ষমতাচ্যুত হন, তখন নওয়াজ শরীফের তদন্ত ব্যুরো সর্বশক্তি নিয়োগ করেও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপন করতে পারেনি।

ইতোপূর্বে পাকিস্তানে ইসলামি অনেক দল ছিল, কিন্তু তা কোনও জাতীয় শক্তির রূপ ধারণ করতে পারেনি। মাওলানা ফজলুর রহমান ২০০২ সালে সব ইসলামী দল নিয়ে ‘মুত্তাহিদা মজলিসে আমল বা এমএমএ’ নামে একটি জোট গঠন করেন।

যার সভাপতি ছিলেন বেরেলভীপন্থি মাওলানা শাহ আহমদ নূরানি এবং সেক্রেটারি বা মূখপাত্র ছিলেন তিনি নিজে। এতে জামায়াত, শীয়াসহ সব মত ও পথের লোকেরা তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং এমএম এ’র ৭২টি আসন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে জয়লাভ করে।

তার স্মরণ শক্তি ও দূরদর্শিতার পর্যালোচনা করতে গিয়ে বিবিসি এক রির্পোটে বলেছে, মাওলানা একসঙ্গে পাঁচটি কাজ সমাধা করতে পারদর্শী। ২০০৫ সালের এশিয়ান সার্ভে রিপোর্টে মাওলানাকে এশিয়ার ৫ম ও বিশ্বের ১৯তম ধীমান রাজনীতিবিদ নির্ধারণ করেছে।