1

আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে আনসার

যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়য়িছেনে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। সরকারের নির্দেশে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে এ বাহিনীর সদস্যরা। সিডর কিংবা আইলা, অথবা করোনা মোকাবেলা, ২০১৪ সালে জ্বালাও-পোড়াও থকেে সড়ক মহাসড়ক, রেল রক্ষা এমনকি সর্বশেষ ঘুর্নিঝড় আম্ফানে ক্ষয় ক্ষতি এলাকায় মানুষের ঘর বাড়ী নির্মাণ বা উপকুলীয় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ নির্মাণ, প্রতিটি কাজেই বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

গত ২০ মে রাতে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্নিঝড় আম্ফান উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক তান্ডব চালায়, ভেঙ্গে যায় ঘর বাড়ী, গাছ পালা, কোথাও কোথাও জান মালেরও ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়, এমনকি উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১২ ফুট জলোচ্ছাসে বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে বাড়ী ঘর পানিতে তলিয়ে যায়। ভেসে যায় সাতক্ষীরা শ্যামনগর এলাকার অধিকাংশ চিংড়ীর খামার। উপকূলীয় এলাকায় আম্ফান শুরু হওয়ার আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর বার বার সতর্ক করে কৃষকের পাকা ধান কেঁটে ঘরে তোলার জন্য। কিন্তু এত অল্প সময়ে পাকা ধান ঘরে তোলা অসম্ভব হলেও বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শরীফ কায়কোবাদ , এনডিসি, পিএসসি, জি এর নির্দেশে কৃষকের পাকা ধান কেঁটে ঘরে তুলে দেন। ১৮ মে থকেে উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে ঝঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে সচেতন করে আশ্রয় যাওয়ার পরামর্শ দেন, এনকি অনেক বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধিদের আশ্রয় কেন্দ্রে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে এ বাহিনীর সদস্যরা। দেশের এই ক্লাতিকালে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতি গ্রস্থ এলাকায় তাদের নিজস্ব অসচ্ছল সদস্যদের মাঝে ত্রাণ ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেন। আম্ফানের কারনে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা এবং রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া গাছ পালা ঘর বাড়ী মেরামতসহ বিভিন্ন কাজে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর খুলনা রেঞ্জের পরিচালক মোল্যা আমজাদ হোসেন বলেন, ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সবচাইতে ক্ষতি গ্রস্থ এলাকা সাতক্ষীরা বাগেরহাট এবং খুলনা জেলা। ঝড় এবং জলোচ্ছাসে বেঁড়ি বাঁধ ভেঙ্গে মানুষের ঘর বাড়ীর ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়, ভেসে যায় তাদের চিংড়ি ঘের, আমাদের মহাপরিচালকের স্যারের নির্দেশে এসব ক্ষতি গ্রস্থ ঘর বাড়ী নির্মাণ কাজে সহযোগীতা করে তাদের ঘর বাড়ী মেরামতের কাজ শেষ করতে পারলেও ভাঙ্গা বেঁড়ি বাঁধ নির্মাণ কাজ এখনও চলছে। এসব বেড়িবাঁধ নির্মানে অন্যান্য বাহিনী এবং সাধারন মানুষের পাশাপাশি আমাদের বাহিনীর সদস্যরা দিন রাত কাজ করছে। আমাদের ডিজি স্যারের নির্দেশ যত দিন না পর্যন্ত ক্ষতি গ্রস্থ এসব বেড়ি বাঁধের কাজ চলবে ততদিন আমাদের সদস্যরা জনগনের পাশে থেকে তাদের সহযোগীতা করবে।

উল্লখ্যে, ১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং তৎকালীন পূর্ববাংলা আইন পরিষদে আনসার এ্যাক্ট অনুমোদিত হলে ১৭ জুন ১৯৪৮ সালে তা কার্যকর হয়। তখন থেকে এ বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে দেশের সীমান্ত ফাঁড়িগুলোতে আনসারদের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার (মুজিবনগর) এর শপথ গ্রহণ শেষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে আনসার প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীর নেতৃত্বে ১২ জন আনসার বাহিনীর সদস্য গার্ড অব অনার প্রদান করে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আনসার বাহিনীকে বিদ্রোহী আখ্যায়িত করে বিলুপ্ত করা হয়। প্রায় ৪০ হাজার রাইফেল নিয়ে আনসার সদস্যরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৯ জন কর্মকর্তা, ৪ জন কর্মচারী ও ৬৫৭ জন আনসারসহ সর্বমোট ৬৭০ জন শহীদ হন। বাহিনীর ১ জন বীর বিক্রম এবং ২ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।