রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
বাগেরহাটে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির আহবায়ক কমিটি বাগেরহাটে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে হাসপাতাল অংশীজনের সভা অনুষ্ঠিত বাগেরহাটে সিটিজেন টাউন হল মিটিং অনুষ্ঠিত বাগেরহাটে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন বাগেরহাটে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা বাগেরহাটে সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক দুইদিন ব্যাপী প্রশিক্ষন শুরু বাগেরহাটে ই-জিপি সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত সমন্বয় করে কাজ করলে দেশে কোন দরিদ্র মানুষ থাকবে না -মহাপরিচালক, এনজিও ব্যুরো কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন বাগেরহাটে জীবন বীমা কর্পোরেশনের ৫০ বছর পূর্তিতে আলোচনা সভা ( ভিডিও)




আবরার মারা গেছে, আমি ওই দফায় বেঁচে ফিরেছি

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯
৬ বছর আগে আনামুল হককে নির্যাতনের ছবি। সর্ব ডানে আনামুল হক। ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

বুয়েটের ও এ বি এর দোতলায় মেকানিক্যাল ড্রয়িং কুইজ দেয়া শেষ হওয়া মাত্রই পরীক্ষার রুম থেকে তন্ময়, আরাফাত, শুভ্র জ্যোতি টিকাদারদের নেতৃত্বে ৮-১০ জন ছাত্রলীগের ছেলে শিক্ষকের সামনে থেকে তুলে নিয়ে আহসানউল্লাহ হলের তখনকার টর্চার সেল ৩১৯ নম্বর রুমে নির্যাতন করে। আমি কারো সাথে যেখানে রাগারাগি পর্যন্ত করতাম না, কারো সাথে কখনোই সম্পর্ক খারাপ পর্যন্ত যেখানে ছিল না, শুধুমাত্র ফেইসবুকে সরকারি নীতির সমালোচনা করে পোস্টের কারণে বুয়েটের মত একটা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ আমার সাথে এমন আচরণ করে।

এর ৬ দিন আগে সাবেক বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার(‘০৯) ও কাজল(‘০৯) ল্যাব থেকে আমাকে ধরতে এসে ব্যর্থ হয়ে পরীক্ষার রুম থেকে আমাকে একা ধরতে ওরা ৮-১০ জন প্রস্তুতি নিয়ে আসে! বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা ৩০! বদ্ধ রুমে আমার পিঠের ওপর লোহা দিয়ে ‘১০ ব্যাচের এক ভাই প্রধানত তার শক্তি পরীক্ষা করে।
এর কতদিন আগে কোনো একটা নামাজ মিস দিয়েছি ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন তারা আসর আর মাগরিব নামাজ পর্যন্ত পড়ার সুযোগ দেয়নি।

সারাজীবন একটি মাত্র স্বপ্ন দেখেছিলাম- বুয়েটে পড়বো। বুয়েটের ছাত্রদের ভাবতাম আদর্শ। অথচ সেখানেও এমন হবে- জানা ছিল না।

ভর্তি পরীক্ষার সময় গুরুজনেরা বলতেন- দোয়া কর, যেখানে তোমার জন্য কল্যাণ, আল্লাহ যেন সেখানেই তোমাকে চান্স পাইয়ে দেন। আর বুয়েটের অন্ধপ্রেমিক এই আমি দোয়া করতাম- আল্লাহ, বুয়েটেই আমার কল্যাণ দাও।

আসলে বুয়েটে পড়ার প্রথম ইচ্ছে হয়েছিল ক্লাস ফাইভে, বাবা বলেছিলেন- ছেলেকে বুয়েটে পড়াতে চাই, সেই থেকে। ভার্সিটি এডমিশনের সময় বাবা অন্য ভার্সিটিগুলোর ফর্ম নিতে দিচ্ছিলেন না, বলছিলেন- ওসবে কালো রাজনীতি ছেয়ে গেছে, বুয়েটেই চান্স পেতে হবে, ওখানেই পড়তে হবে, ওখানে কালো রাজনীতি নেই। জানি, তুমি পারবা।

পরবর্তীতে আমার বাবা আমার ওপর নির্যাতন দেখে ডুকরে কেঁদেছেন। আমি হাসিমুখে বলেছি- সব ঠিক হবে, আল্লাহ ভরসা, কোনো অন্যায় করিনি, আমার আল্লাহ সাক্ষী, আল্লাহই এর প্রতিদান দেবেন।

মায়ের কান্নাজড়িত চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার ছিল না, মনে মনে ভেবেছি- “আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো মা, তোমার ছেলে কেমন।”

এত নির্যাতনের পর আবার আমাকেই উল্টো পুলিশে দেয়ার জন্য পুলিশ ডেকে আনে। কিছু শিক্ষক অনেক চেষ্টা করে আর অনেক অপমান সহ্য করেও তাদের থেকে বাঁচিয়ে নেন।

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক দেলোয়ার স্যারকে পরে অভিযোগ জানালে উনি বলেন, ওদের সাথে তাল মিলিয়ে চল না কেন? হায়রে! সেদিন চ্যালেঞ্জ করেছিলাম স্যারকে- এ রকম শুধু আমাকেই না, আরো ১৭টি নির্যাতনের ঘটনা কিছুদিনেই ঘটেছে। অথচ যারা ভুক্তভোগী তাদের বিরুদ্ধে একটা মাত্র বুয়েটের শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা কারো সাথে ঝামেলার ঘটনার প্রমাণ দেন। আর যারা নির্যাতন করছে- তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কত গুণ্ডামির প্রমাণ লাগে বলুন।

আল্লাহ তুমি সাক্ষী…আমার বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগ ওরা প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু আমার এই ছবিগুলো তখনই প্রচার হয় বলে ওরা এতে ব্যাপক ক্ষেপে যায়। পাশাপাশি বুয়েট শিক্ষক সমিতি এর বিচারের দাবি জানিয়ে লিখিত বিবৃতি দিয়েছিল। আমাকে ওরা এজন্য ক্যাম্পাসেই ঢুকতে দিতো না, মৃত্যুর হুমকি দিতো। এসব দেখে অন্য নির্যাতিত আরও অসংখ্য ছাত্র নির্যাতিত হলেও প্রকাশ করতো না। নইলে বুয়েটে পড়াশোনা কন্টিনিউ করাই সম্ভব হবে না ওদের।

সেদিন দলকানা ছাত্রকল্যাণ পরিচালক চরম অসহযোগিতা করেছেন। পক্ষান্তরে নিরপেক্ষ শিক্ষকেরা অপমান সহ্য করেও আমাকে উদ্ধার করেছেন। দলকানা শিক্ষকেরা সব সময় স্বার্থবাদী হয়। আমি জীবন নিয়ে ফিরতে পারলেও আবরার জীবন দিল। এভাবে অপরাজনীতির শিকার আরও কত জীবন হবে তা ভাবা অসম্ভব।

এসব অপরাজনীতি থাকলে ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরবেই। তাই নির্যাতিত ছাত্র হিসেবে দাবি জানাই- ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হোক, ছাত্র এবং শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক।

আমি বুয়েটিয়ান হিসেবে লজ্জিত নই, লজ্জা তাদেরই পাওয়া উচিত, যারা অন্যায় করেছে অথবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। ভালোবাসি বুয়েট, ভালোবাসি বাংলাদেশ।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, বুয়েট

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765