1

আধুনিক নাগরিক সুবিধায় পূনর্বাসন করা হচ্ছে ৩৫০ পরিবারকে

গুচ্ছগ্রাম-২ প্রকল্পের আওতায় খুলনার কয়রা উপজেলায় নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন এমন ৩৫০ পরিবারকে আধুনিক সকল সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সাথে সরকারিভাবে এসব পরিবারকে দেওয়া হবে ৪ থেকে ৮ শতাংশ নিষ্কন্টক জমির মালিকানা। এ জন্য উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বাছাইকৃত স্থানে ২১ একর খাস জমিতে এসব পরিবারের জন্য আবাসন গড়ে তোলার কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ি, প্রতিটি পরিবারের জন্য ৩০০ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস ও আরসিসি পিলারসহ দুইকক্ষ বিশিষ্ট ঘর এবং ৫ রিং বিশিষ্ট স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া পুনর্বাসিত প্রতিটি পরিবারকে একটি করে মোট ৩৫০  উন্নত চুলা সরবরাহ করা হবে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় হবে বসতভিটা উঁচুকরণ, পুকুর খনন, পুনঃখনন, সংযোগ রাস্তা ইত্যাদি নির্মাণ। নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্থাপন করা হবে বিভিন্ন প্রকারের গভীর-অগভীর নলকূপ/রিংওয়েল/পন্ডস্যান্ড ফিল্টার ইত্যাদি।

এর বাইরে উন্নত জীবনমান সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে গুচ্ছগ্রামগুলোতে নির্মাণ করা হবে ৩টি মাল্টিপারপাস হল, গোসলখানা এবং  ঘাটলা। সেই সঙ্গে গুচ্ছগ্রামবাসী পাবেন বিদ্যুৎ সরবারহ সুবিধা।
কয়রায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সভাপতি ও সহকারি কশিশনারকে (ভূমি) সদস্য সচীব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা এ কমিটির সদস্য হিসেবে সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত ‘গুচ্ছগ্রাম-২য় পর্যায়’ প্রকল্পের আওতায় ৩৫০ গৃহহীন পরিবারকে পূনর্বাসনের জন্য পৃথক তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলো হলো, কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের কপোতাক্ষ নদীর চর ভরাটি জমিতে ২২০ পরিবার, মহারাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব মঠবাড়ি গ্রামের শাকবাড়িয়া নদীর চর ভরাটি জমিতে ৭০ পরিবার ও বাগালি ইউনিয়নের শেওড়া এলাকার কপোতাক্ষ নদীর চরে ৬০ পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গোবরা এলাকায় প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পথে।

নদী ভাঙনে শিকার গোবরা গ্রামের রবিউল ইসলাম কপোতাক্ষের বাঁধের ঢালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রায় দু’বছর ধরে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানেই বসবাস করছেন। বর্তমানে সেখানে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। রবিউলকে ওই প্রকল্পের আওতায় আবাসস্থল দেওয়া হবে বলে আশ্বস্থ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা।
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এতদিন পর নিজের বলে কিছু পেতে যাচ্ছি। সরকার আমাদের জন্য সব রকমের সুযোগ-সুবিধে দিয়ে ঘর বানিয়ে দিচ্ছে। শুনেছি এখানে ছেলেমেয়েদের জন্যি স্কুল, খেলার মাঠ করা হবে। বড়দের জন্যিও নানান সুযোগ-সুবিধে দেওয়া হবে।’

একই এলাকার সোনাভান বিবি তাঁর ভাষায় জানান, দীর্ঘ দিন ধরে তার মত অনেকেই এলাকার উঁচু বাঁধের উপর বসবাস করতেন। এখন তাদের অনেকেই এ প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ি বসতঘর পাবেন। এটি তাদের জন্য অনেক ভাল খবর।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, চলমান গুচ্ছগ্রাম-২ প্রকল্পের অধীনে সরকারিভাবে সারাদেশে ৫০ হাজার ভূমিহীনের জন্য গৃহনির্মাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কয়রা উপজেলায় ৩৫০ ভূমিহীন পরিবারকে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের সার্বিক লক্ষ্য হলো জলবায়ু দুর্গত ভূমিহীন পরিবারকে সরকারী খাস জমিতে পুনর্বাসন করা। এজন্য নির্মিত ইকোভিলেজে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে এবং বিধবাদের ক্ষেত্রে একক নামে বসত-ভিটার কবুলিয়াত প্রদান করা হবে। এতে মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠিকানা মিলবার পাশাপাশি জমির মালিকানা, সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহ আর সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুযোগ তৈরি হবে। প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো- মানব সম্পদ উন্নয়নে পুনর্বাসিত পরিবারসমূহের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণসহ আয়বর্ধক কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা, যা দেশের দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।