1

আজ ইংল্যান্ড, না অস্ট্রেলিয়া

এ এমন এক ম্যাচ, যেখানে প্রতিপক্ষ বড় ব্যাপার নয়। ওজন বোঝাতে সেমিফাইনাল নামটাই যথেষ্ট। এ এমন দুটি নাম, যেখানে উপলক্ষ কোনো ব্যাপার নয়। ঝাঁজ বাড়াতে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়াটাই যথেষ্ট।

এজবাস্টনে আজ আগুনে লড়াইয়ের এ দুটো ‘যথেষ্ট’ মিলে যাচ্ছে এক বিন্দুতে। বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ওঠার লড়াইয়ে বাইশ গজে মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। যে লড়াই দুই দেশের জন্য শুধু টুর্নামেন্টে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া-না যাওয়াই নয়, জাতিগত অহমিকা আর মর্যাদাবোধের চিরন্তন লড়াইয়েরও। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায়।

১৪ জুলাই লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ হওয়ার এ লড়াইয়ে কথার লড়াই শুরু হয়ে গেছে সেমির লাইনআপের পরপরই। কূটনৈতিক পরিভাষার ধার না ধেরে বেন স্টোকস সাফ বলেছেন, ‘দেশের ইতিহাসে, আমার ক্যারিয়ারের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।’ ওদিকে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও নরম সুরে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে গলা চড়িয়ে ফেলেছেন গতকাল, ‘এজবাস্টনে আমরা ২৬ বছর জিতিনি ঠিকই, কিন্তু ইতিহাস লেখা হয় তো ভাঙার জন্যই। এবার ভাঙবে।’ এ দু’জনের আগে লড়াইয়ের ঝাঁজ বাড়িয়েছেন নাথান লায়ন, জো রুট, লিয়াম প্লাংকেট, পিটার হ্যান্ডসকম্বরাও। এরই মধ্যে অসি অফস্পিনার লায়নের কথারই প্রতিধ্বনি হচ্ছে বেশি, ‘চাপ ইংল্যান্ডের; আমাদের সামনে অর্জনের সুযোগ, কিন্তু ওদের জন্য বিসর্জনের।’ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে এবার টুর্নামেন্ট-পূর্ব ‘হাইপ’ অত বেশি ছিল না। শেষের দুই মাস বাদ দিলে বিগত দেড় বছর ক্যাঙ্গারুদের ক্রিকেট এত এলোমেলো হয়ে পড়েছিল যে, স্টিভেন স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নার ফিরলে কতটা লাভ হবে- এ নিয়ে সংশয় ছিল অনেকের। সেই সংশয় কাটিয়ে শেষ চারে ওঠার পর এখন ফাইনালে যেতে পারলে, আরেকটু এগিয়ে শিরোপা জিততে পারলে অস্ট্রেলিয়ার অর্জনের পাল্লাই কেবল ভারী হবে। পাঁচ শিরোপার সঙ্গে যোগ হবে আরও একটি; কিন্তু হেরে গেলে চারদিকে একেবারে হায় হায় রব উঠবে না, যেটা হবে ইংল্যান্ডের বেলায়। বলা হচ্ছে ইংল্যান্ডের এবারের দলটি তাদের ইতিহাসের সেরা দল, আইসিসি র‌্যাংকিংও বলছে তেমনটাই। এখন পর্যন্ত হওয়া ১১ বিশ্বকাপের তিনটিতে ফাইনাল খেলে না জেতার পরও এই দলটিতে ভর করছে গভীর আস্থা। বিগত চার বছর ওয়ানডেতে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলার কারণে শুরু থেকেই প্রায় সব বিশ্নেষক, সাবেক ক্রিকেটাররা ইয়ন মরগানদের ওপর বাজি ধরছেন। এমনকি গতকালও অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার ইংল্যান্ড স্কোয়াডকে বলেছেন ওয়ানডের ‘বেঞ্চমার্ক টিম’। ৩০ মে দ্বাদশ বিশ্বকাপ শুরুর আগে এমনও আলোচনা ছিল যে, ‘ফাইনালের একটি দলের নাম অবশ্যই ইংল্যান্ড, অপর দল কে হবে? এমন আকাশচুম্বী উচ্চাশা যাদের নিয়ে, সেই দলটি যদি শেষ চার থেকে বিদায় নেয় বা শিরোপা জিততে না পারে, তাহলে তা বিসর্জন নয় তো আর কী!

রাউন্ড রবিন পদ্ধতির কারণে লীগ পর্বে এবারের আসরে এরই মধ্যে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার এক দফা দেখা দেখা হয়ে গেছে। ২৫ জুন লর্ডসের সেই ম্যাচে ৬৫ রানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। বিস্ম্ফোরক ব্যাটসম্যানে ভরতি ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপে সেদিন ঝড় তুলেছিলেন মিচেল স্টার্ক, জেসন বেহরনড্রপরা। দুই সপ্তাহ পরের দ্বিতীয় লড়াইয়ে স্টার্ক, বেহরনড্রপরা টিকে থাকলেও একাদশে আসছে একাধিক বদল। চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া উসমান খাজার পরিবর্তে অভিষেক করানো হচ্ছে ডানহাতি ব্যাটসম্যান পিটার হ্যান্ডসকম্বকে। আর ব্যাটে-বলে অফফর্মে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের জায়গায় নেওয়া হতে পারে ম্যাথু ওয়েডকে। এ ছাড়া চার নম্বর পজিশন থেকে তিনে উঠে আসছেন স্মিথ। ওপেনিংয়ে যথারীতি ওয়ার্নার-ফিঞ্চই থাকছেন। তুলনায় ইংল্যান্ডের একাদশে বদলের সম্ভাবনা কম। ওপেনিংয়ে জনি বেয়ারস্টো-জেসন রয়কে দিয়ে শুরু, এরপর জো রুট, ইয়ন মরগান হয়ে জশ বাটলার, স্টোকসরা। শিরোপার প্রধান দাবিদার হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গন্তব্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল মরগানদের। লীগ পর্বের শেষ দুটি ম্যাচ খেলতে হয়েছে ‘মাস্ট উইন’ হিসেবে। ভারত আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সে দুটি ‘নক আউট’ জেতার এ যাত্রায় ভার্চুয়ালি তৃতীয় নকআউট। আজ টসের পর মাঠে নামার মাধ্যমেই অবশ্য বড়সড় এক বাধা পার করে ফেলবে স্বাগতিকরা। ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম তারা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলছে। তবে ২৭ বছর পর সেমির মঞ্চে নামতে হচ্ছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে- চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দিচ্ছে এটি। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত আটবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলে জয়ও তাদের মাত্র দুটি। তবে আজকের ভেন্যু এজবাস্টন দিচ্ছে বাড়তি অনুপ্রেরণা। এ মাঠে খেলা সর্বশেষ ১০ ম্যাচের সবগুলোই জিতেছে ইংল্যান্ড, যার মধ্যে আছে লীগ পর্বে ভারতকে হারানো ম্যাচও। বিপরীতে ১৯৯৩ সালের পর বার্মিংহামের মাঠটিতে জয় নেই অসিদের। ২৬ বছর না জেতার বিব্রতকর রেকর্ডটি এবার ভাঙার ঘোষণা দিয়েছেন অ্যারন ফিঞ্চ। কিন্তু একই ম্যাচে স্টোকসরা চান শিরোপাজয়ের দ্বিতীয় শেষ ধাপের আক্ষেপ ঘোচাতে।