1

অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের আল্লাহ ভীষণ অপছন্দ করেন

ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। মানবসমাজ থেকে ফেতনা ফাসাদ জুলুম অনাচার দূর করে ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ উপহার দেয়া ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য।

এ জন্য যুগে যুগে মানবতা বিচ্যুত মানুষকে ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু নবী-রাসুল (সা.) প্রেরণ করেছেন।

যারা অন্ধকার জগতের বাসিন্দাদের আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন। দিশাহীনদের সঠিক পথ বাতলে দিয়েছেন। অসহায় ও মাজলুমদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

বোমাবাজি, মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি এবং সব প্রকার আত্মঘাতী তৎপরতা ইসলামে গুরুতর পাপ। সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা পরিহার করে ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই ইসলামের নির্দেশনা।

কারণ ইসলাম অসাম্প্রদায়িক এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। অন্যায়ভাবে বিচারবহির্ভুত মানুষ হত্যা, পৃথিবীতে রক্তপাত, অরাজকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ।

শুধু ইসলাম ধর্মই নয় বরং এসব কর্মকাণ্ড যেকোনো ধর্ম, মতাদর্শ ও সভ্যতাবিরোধী। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িতরা বিপদগামী। প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নরহত্যা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল’। (সূরা মায়েদা : ৩২)।

মহাগ্রন্থ আল কোরআন কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভয়ংকর শাস্তি’। (সুরা নিসা : ৯৩)।

আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, ‘আর যে কারো প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। (সূরা মায়েদা ৩২)। হাদিসে এরশাদ হয়েছে, কেয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম রক্তপাত তথা হত্যার বিচার হবে’। (বুখারি : ৬৫৩৩)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! মানুষ এমন এক সময়ের মুখোমুখি হবে, যখন হত্যাকারীও জানবে না যে, কেন সে হত্যা করল। নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, কেন তাকে হত্যা করা হলো’। (মুসলিম : ২৯০৮)।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী কোনো কাফেরকে (জিম্মিকে) হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছর দূরের পথ হতেও পাওয়া যাবে। (বুখারি : ৩১৬৬)।

আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘ফেতনা (দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা ও গৃহযুদ্ধ) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর পাপ।’ (সুরা বাকারা : ১৯১)।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, নরহত্যা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল। (সুরা মায়েদা : ৩২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া গুনাহর কাজ আর তাকে হত্যা করা কুফরী কাজের অন্তর্ভুক্ত (মুসলিম : ১১৬)।

ইসলাম জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদে বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হইও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা কাসাস ৭৭)।

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এ কথাই প্রতীয়মান হলো, ইসলাম সর্বপ্রকারের উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। ইসলামের আইনে যেভাবে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ঘৃণিত অপরাধ, তেমনি রাষ্ট্রীয় আইনেও মারাত্মক অপরাধ। কাজেই সমাজ-রাষ্ট্রে ফেতনা-ফাসাদ, বিশৃঙ্খলাকারী এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক। প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।